বিশ্ব ইজতেমা ২০২৪ শুরু হচ্ছে শুক্রবার থেকেবিশ্ব ইজতেমা ২০২৪

তাবলিগ জামাতের অন্যতম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা শুরু হচ্ছে ০২-০২-২০২৪ ইং তারিখ থেকে। তাবলিগ জামায়াত বিশ্বব্যাপি বিস্তৃত এক ইসলামী সংগঠন। ঢাকার তুরাগ নদীর ধারে অনুষ্টিত ৩ দিন ব্যাপি এ  বিশ্ব ইজতেমা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মানুষের এক অনন্য সমাবেশ। সমগ্র বিশ্ব থেকে আগত প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ মানুষ বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। সেকারণে অনেকে মনে করেন হজ্বের পরে মুসলমানদের বিশ্বের সবচেয়ে বড় জমায়েত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা। সাধারণত প্রতিবছর শীতকালে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়ে থাকে। বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইজতেমা শব্দের অর্থ কী ?

ইজতেমা একটি আরবি শব্দ। ইজতেমা শব্দের অর্থ সম্মেলন, সভা বা সমাবেশ। 

কখন থেকে বিশ্ব ইজতেমা পালিত হচ্ছে?

১৯৬৭ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা  প্রতিবছর পালিত হচেছ। তবে ১৯৪৬ সালে ঢাকার রমান পার্ক সংলগ্ন কাকরাইল মসজিতে সর্বপ্রথম তাবলিগ জামাতের প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৫৮ সালে বর্তমান নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৭২ সাল থেকে বর্তমান টঙ্গীর তুরাগ নদীর সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ১৬০ একর জায়গায় বিশাল খোলা মাঠে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ১৯৫০ সালের দিকে মাওলানা আবদুল আজিজ তাবলিগ জামাতের প্রবর্তন করেন। বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মসজিত ঢাকার কাকরাইল মসজিদ থেকে এই সমাবেশ কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়।

বিশ্ব ইজতেমার সময়সূচি:

বিশ্ব ইজতেমা দুইপর্বে ২০১১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ২, ৩,৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ এবং দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ৯,১০,১১ ই ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ।

ইজতেমা পরিচালনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

বিশ্ব ইজতেমা সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিসসহ আয়োজক কমিটির সকল সদস্য প্রস্তুত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দল নিজ নিজ সেল গঠন করেছে। সাংবাদিকরা প্রস্তুত রয়েছে।

যাতায়াত ব্যবস্থা

বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা সহজেই যাতে দূরদূরান্ত থেকে অংশগ্রহণ করতে পারে তার জন্য সাধারণ পরিবহনের পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ে ১৭টি স্পেশাল ট্রেন নিযুক্ত করেছে। ২৩ জানুয়ারি বেলা ১১টায় রেলভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো কামরুল আহসান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। এসময় বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমও উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ব ইজতেমা ২০২৪ শুরু হচ্ছে শুক্রবার থেকে

বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা-

টঙ্গীতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমা নিরাপদ ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ইজতেমায় আসা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উদ্দেশে ১১টি নির্দেশনা দিয়ে সেগুলো মেনে চলতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি ২০২৪) পুলিশ সদরদপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের পুলিশ সুপার ইনামুল হক সাগর এ তথ্য জানান। এসময় তিনি ১১টি নির্দেশনা তুলে ধরেন।

নির্দেশনাগুলো হলো-

১. ইজতেমায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন এবং প্রয়োজনে সহযোগিতা নেবেন।

২. নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান করবেন এবং অপরিচিত ও সন্দেহভাজন ব্যক্তি এবং কোনো পোটলা, ব্যাগ বা সন্দেহজনক বস্তুর উপস্থিতি দেখামাত্র তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবহিত করবেন।

৩. টাকা, মূল্যবান সামগ্রীসহ একাকী বিক্ষিপ্তভাবে ঘোরাফেরা করবেন না এবং সবসময় টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী নিজ হেফাজতে রাখবেন। টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী চুরি বা হারিয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবহিত করবেন।

৪. হকার ও ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে খাদ্য বা পানীয় গ্রহণে অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির কবলে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

৫. মুসল্লিদের নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন চলাচলের সুবিধার্থে ইজতেমা চলাকালে প্রধান সড়কসমূহ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় তাঁবু খাটাবেন না কিংবা অন্য কোনোভাবে সড়ক ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ব্যবহার করবেন না।

৬. অসুস্থ হলে ইজতেমার জন্য নির্ধারিত অস্থায়ী হাসপাতাল ও নিকটবর্তী হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বা প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহায়তা নেবেন।

৭. গুজব শুনলে বা কোনো প্রকার দুর্ঘটনা ঘটলে ধৈর্য ধরে সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করবেন।

৮. ট্রেনে নাশকতা সম্পর্কে তথ্য জানতে পারলে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটবর্তী থানা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানাবেন।

৯. রান্না করার সময় আগুন থেকে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সতর্ক থাকবেন। খিত্তা এলাকায় বা নিজেদের অবস্থানস্থলে ধূমপান করবেন না। খিত্তায় সবসময় পানি মজুত রাখবেন।

১০. ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে ঢাকা মহানগরীর প্রগতি সরণি থেকে টঙ্গী ফ্লাইওভার পর্যন্ত, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী ফ্লাইওভার থেকে চৌরাস্তা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রধান সড়কের ৫০ গজের মধ্যে মাইক লাগাবেন না।

১১. জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ট্রেনে কিংবা অন্য কোনো যানবাহনে চলাচল করবেন না।

জরুরি প্রয়োজনে ইজতেমাস্থলের নিকটস্থ পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে –

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ : উপ-পুলিশ কমিশনার, উত্তরা- ০১৩২০-০৪১৭৪০, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এয়ারপোর্ট)- ০১৩২০-০৪১৭৪১, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণখান)- ০১৩২০-০৪১৭৪২, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তরা)- ০১৩২০-০৪১৭৪৩, সহকারী পুলিশ কমিশনার (উত্তরা)- ০১৩২০-০৪১৭৫৪, সহকারী পুলিশ কমিশনার (এয়ারপোর্ট)- ০১৩২০-০৪১৭৫৭, সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তরা পশ্চিম জোন)- ০১৩২০-০৪৩৯৫৫, অফিসার ইনচার্জ, উত্তরা পূর্ব থানা- ০১৩২০-০৪১৭৮৯, অফিসার ইনচার্জ, উত্তরা, পশ্চিম থানা- ০১৩২০-০৪১৮১৭, অফিসার ইনচার্জ, তুরাগ থানা- ০১৩২০-০৪১৮৪৫, ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম- ০১৭১১-০০০৯৯০।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ: উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ)- ০১৩২০-০৭০৩৩০, অতিরিক্ত উপ- পুলিশ কমিশনার (অপরাধ দক্ষিণ)- ০১৩২০-০৭০৬৪১, সহকারী পুলিশ কমিশনার (টঙ্গী জোন)- ০১৩২০-০৭০৬৫৮, অফিসার ইনচার্জ, টঙ্গী পশ্চিম থানা- ০১৩২০-০৭০৭৫১, ডিউটি অফিসার, টঙ্গী পশ্চিম থানা- ০১৩২০-০৭০৭৫৯, অফিসার ইনচার্জ, টঙ্গী পূর্ব থানা- ০১৩২০-০৭০৭২২, ডিউটি অফিসার, টঙ্গী পূর্ব থানা- ০১৩২০-০৭০৭৩০, ডিউটি অফিসার, টঙ্গী পূর্ব থানা- ০১৩২০-০৭০৭৩০, ইজতেমা কন্ট্রোল রুম (হটলাইন)- ০১৩২০-০৭২৯৯৯, কন্ট্রোল রুম, জিএমপি- ০১৩২০-০৭২৯৯৮, ট্রাফিক কন্ট্রোল
রুম-০১৩২০-০৭১২৯৮।

র‍্যাব : র‍্যাব-১ কন্ট্রোল রুম- ০১৭৭৭৭১০১৯৯, র‍্যাব হেডকোয়ার্টার্স কন্ট্রোল রুম- ০১৭৭৭-৭২০০২৯ এবং প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *