রূপচর্চা সময়ের অপচয় বিষয়ে- রম্য বিতর্ক

রূপচর্চা সময়ের অপচয়’ বিষয়ক রম্য বিতর্কে পক্ষে প্রথম বক্তার বক্তব্য

চট্টগ্রাম শহরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ’ কর্তৃক আয়োজিত আজকের রম্য বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপস্থিত মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত দর্শকবৃন্দ এবং আমার সম্মানিত পক্ষ ও বিপক্ষ দলের বিতার্কিক বন্ধুরা— সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

আজকের বিতর্কের বিষয় রূপচর্চা সময়ের অপচয়”। প্রস্তাবিত বিষয়ের পক্ষে আমি ও আমার দলের অবস্থান। রূপচর্চা মানে হলো—চুলে ঘন্টার পর ঘন্টা তেল মাখা, চোখে কাজল টানা, মেকআপ বক্সের সব রঙ দিয়ে নিজের মুখটাকে এমন বানানো, যেন পুরাতন দেয়ালকে রং মেখে চকচকে করা, আর সময়ের অপচয় মানে হলো—যে সময় পড়াশোনা, কাজ, ঘুম কিংবা খাওয়া-দাওয়ার পেছনে ব্যয় হওয়ার কথা, তা যদি মেকআপের পাফ, ব্রাশ আর চুল বাঁধার ক্লিপে নষ্ট হয়, সেটাই হলো অপচয়।

বন্ধুগণ, আমরা যদি হিসাব করি—একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২ ঘণ্টা রূপচর্চায় ব্যয় করে। মাসে দাঁড়ায় ৬০ ঘণ্টা, আর বছরে দাঁড়ায় প্রায় ৭২০ ঘণ্টা! অর্থাৎ পুরো ৩০ দিন! ভাবুন তো, এই ৩০ দিনে কেউ পুরো দুইটি বই শেষ করতে পারত, কেউ হয়তো সাইকেল চালিয়ে সৌদি আরবে গিয়ে হজ্ব করতে পারতো। —কিন্তু আমাদের রূপচর্চাকারী ভাই-বোনেরা তখনো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে “বাম দিকটা একটু বোশ কালো হলো কেন? ডান দিকটা বেশি ফর্সা হলো কেনো তাই চিন্তায় মগ্ন।

মাননীয় সভাপতি, একটা বাস্তব ঘটনা শেয়ার করি—আমার এক বন্ধু প্রতিদিন কলেজে আসার আগে চুলে জেল দিয়ে “স্টাইলিশ লুক” বানাতে ব্যস্ত থাকত। একদিন তাড়াহুড়া করতে গিয়ে এত জেল মাখল যে পাখিরা তাকে দেখে মনে করল গাছের ডাল! সত্যি ঘটনা—একটা কাক তার মাথার ওপর বসে পড়েছিল! (হাসি) এখন বলুন তো, এই রূপচর্চা ছাড়া সে অন্তত কাক থেকে মুক্তি পেত।

আবার মেয়েদের কথাই ধরা যাক। পরীক্ষার হলে যখন আমাদের পাশের বান্ধবীরা প্রশ্নপত্র পড়ার আগেই লিপস্টিকের রঙ ঠিক করছে, তখন আমি ভাবি—বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি পরিবর্তন হলে হয়তো এত হিসাব-নিকাশও লাগত না, যতটা হিসাব ওরা লিপস্টিকের শেডে করে!

প্রশ্ন থাকল প্রতিপক্ষের কাছে— যদি রূপচর্চাই এত মূল্যবান হয়, তবে ” বিউটি পার্লারের ডিপার্টমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই কেন?”

মাননীয় সভাপতি, রূপচর্চা সাময়িক আনন্দ দিতে পারে, কিন্তু তা স্থায়ী কোনো ফল আনে না। যেমন ধরুন—ভোরে উঠে কেউ যদি বই পড়ার বদলে মেকআপ করে, তার ফলাফল পরীক্ষার খাতায় “মেকআপ লাইন” আকারে লেখা হবে না, বরং শূন্য নম্বরই তার প্রাপ্তি হবে।

আমি দৃঢ়ভাবে বলছি—রূপচর্চা সময়ের অপচয়, কারণ:
১. এটি অপ্রয়োজনীয় দীর্ঘ সময় খেয়ে নেয়।
২. পড়াশোনা, কাজ ও সৃজনশীলতার জায়গায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
৩. কখনো কখনো হাস্যকর পরিস্থিতিও তৈরি করে—যেমন, মেকআপ ধুয়ে গেলে আসল চেহারা দেখে মানুষ ভয় পায়!

শেষ করার আগে একটা ছোট্ট উপমা দিই—
রূপচর্চা হলো সেই মোবাইল অ্যাপের মতো, যেটা ডাউনলোড করতে গিয়ে অনেক এমবি খরচ হয়, ফোনও স্লো হয়ে যায়, আর শেষে দেখা যায় অ্যাপটা দিয়ে কোনো কাজই করা যাচ্ছে না। তাহলে আসুন আমরা সবাই একমত হই—রূপচর্চা নিছকই সময়ের অপচয়। ধন্যবাদ, সবাইকে।

আমি আমার বক্তব্য এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করছি।

 

রূপচর্চা সময়ের অপচয়’ বিষয়ক রম্য বিতর্কে বিপক্ষে প্রথম বক্তার বক্তব্য

আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী”—আমাদের সমাজের এই চিরন্তন প্রবাদটি এখনো প্রচলিত।। অর্থাৎ, মানুষ প্রথমে কারো চেহারা, ব্যক্তিত্ব, উপস্থাপন ভঙ্গি দেখে; পরে বিচার করে তার জ্ঞান, গুণ, দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা।

মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত দর্শকবৃন্দ, এবং আমার সম্মানিত পক্ষ ও বিপক্ষ দলের বিতার্কিক বন্ধুগণ—আপনাদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

আজকের বিষয় রূপচর্চা সময়ের অপচয়”। এখানে ‘রূপচর্চা’ মানে হলো নিজেকে পরিপাটি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, সুদর্শন বা আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা। আর ‘সময় অপচয়’ মানে হলো—যে সময় কোনো কাজে ইতিবাচক ফল বয়ে আনে না, সেই সময়কে নষ্ট বলা যায়।

এখন প্রশ্ন হলো—রূপচর্চা কি আসলেই সময়ের অপচয়? মাননীয় সভাপতি, আমি দৃঢ়ভাবে বলছি—না,   তা নয়!

কারণ, রূপচর্চা শুধু সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না,  আত্মবিশ্বাসও বাড়ায়। ধরুন, পরীক্ষার হলে যদি চুল এলোমেলো, জামা-কাপড় কুঁচকানো, মুখে ঘুম জড়ানো অবস্থা নিয়ে কেউ বসে, তবে পরীক্ষক ভাববেন—এই ছাত্রের খাতাও হয়তো তেমন অগোছালো! অথচ পরিপাটি পোশাকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বসলে শিক্ষকও মনে করবেন—আহা! এ বুঝি মেধাবী ছাত্র বা ছাত্রী। অর্থাৎ, রূপচর্চা পড়াশোনা বা কাজের ফলাফলেও মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রভাব ফেলে।

এখন আসি পক্ষ দলের প্রথম বক্তার প্রশ্নে—তিনি বললেন, যদি রূপচর্চা এতই গুরুত্বপূর্ণ হয় তবে ” বিউটি পার্লারের ডিপার্টমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই কেন?” মাননীয় সভাপতি, “বিউটি পার্লার বিভাগ” বিশ্ববিদ্যালয়ে না থাকার পেছনে মূলত শিক্ষার ধরণ ও লক্ষ্যভেদের বিষয়টি কাজ করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা প্রদান। এখানে বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য, চিকিৎসা, প্রকৌশল ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে তাত্ত্বিক ও গবেষণামূলক দক্ষতায় সমৃদ্ধ করা হয়।রূপচর্চা তার মূল লক্ষ্য নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতোমধ্যে “ফ্যাশন ডিজাইন”, “টেক্সটাইল”, “কসমেটিক কেমিস্ট্রি”, এমনকি “ডার্মাটোলজি (ত্বক বিজ্ঞান)” পড়ানো হয়। এগুলো থেকেই পার্লার সম্পর্কিত জ্ঞানকে প্রয়োগ করা যায়। আলাদা একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ খোলার প্রয়োজন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেটি করে না।

মাননীয় সভাপতি, একটা হাসির ঘটনা শেয়ার করি।
আমার এক বন্ধু ইন্টারভিউ দিতে গেল। চুল এলোমেলো, জামায় ভাঁজ, মুখে ঝিমঝিম ভাব। ইন্টারভিউ বোর্ড তাকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করল—“ভাই, আপনি কি ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন নাকি ঘুম থেকে উঠে সরাসরি চলে এসেছেন?”
অন্যদিকে আরেকজন, সামান্য রূপচর্চা করে, হালকা পারফিউম মেখে, পরিপাটি হয়ে গেল। বোর্ড তাকে দেখে বলল—“অন্তত প্রথম ইম্প্রেশনটা ভালো।” এখন বলুন তো, কার সময় নষ্ট হলো, আর কে লাভবান হলো?

এবার পক্ষ দলের প্রতি আমার প্রশ্ন—
আপনারা বলেন রূপচর্চা সময়ের অপচয়। কিন্তু যদি রূপচর্চা সত্যিই অপ্রয়োজনীয় হতো, তবে সারা দুনিয়ায় “বিউটি অ্যান্ড গ্রুমিং ইন্ডাস্ট্রি” কোটির পর কোটি টাকা আয় করত কীভাবে? তাহলে কি পুরো পৃথিবীটাই বোকা, আর কেবল আপনারাই জ্ঞানী?  শৈল্পিকভাবে বলি—রূপচর্চা হলো গাছের পাতার মতো। গাছ যেমন শুধু ফলেই টিকে থাকে না, পাতার সৌন্দর্য ও শীতলতা দিয়েও মন ভরে তোলে, তেমনি মানুষও শুধু মেধায় নয়, পরিচ্ছন্ন রূপ ও ব্যক্তিত্ব দিয়েও সমাজে গ্রহণযোগ্য হয়। তাহলে আমরা কি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি না— রূপচর্চা সময়ের অপচয় নয়, বরং সময়কে সার্থক করে তোলে? সম্মানিত সবাইকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আমার বক্তব্য এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করছি।

রূপচর্চা সময়ের অপচয়’ বিষয়ক রম্য বিতর্কে পক্ষে দ্বিতীয় বক্তার বক্তব্য

মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত দর্শকবৃন্দ এবং প্রিয় বিপক্ষ দলের বিতার্কিক বন্ধুগণ—
সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা। আমি আজ পক্ষে দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছি।

প্রথমেই বিপক্ষ দলের প্রথম বক্তার প্রশ্নের উত্তর দিই। তারা বলেছেন—“যদি রূপচর্চা অপ্রয়োজনীয় হয়, তবে কসমেটিকস ও বিউটি ইন্ডাস্ট্রি কোটি কোটি টাকা আয় করছে কীভাবে? তবে কি সারা দুনিয়া বোকা আর কেবল পক্ষ দল জ্ঞানী?”

বন্ধু, আমার উত্তর হলো— বেশ! তাহলে ধরুন, সিগারেট ইন্ডাস্ট্রিও কোটি কোটি টাকা আয় করছে, ওষুধ কোম্পানি কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে অসুখ-বিসুখ বাড়িয়ে। তাহলে কি সিগারেট খাওয়া বা অহেতুক ওষুধ খাওয়া ভালো কাজ? সমাজে চাহিদা থাকলেই জিনিসটা উপকারী হয়ে যায় না। চাহিদা থাকলেই সব কিছু যৌক্তিক হয়—এই ধারণা হলো মেকআপের মতোই কৃত্রিম।

এবার আসি মূল আলোচনায়।বিপক্ষ বন্ধু বলেছেন— “আগে দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী।”
কথাটা ঠিক, তবে আমি বলব—“আগে দর্শনধারী হলেও, পরে যদি গুণ শূন্য হয় তবে দর্শনের মূল্য শূন্য।”
অর্থাৎ, প্রথম ইম্প্রেশন যতই সুন্দর হোক না কেন, গুণ যদি না থাকে তবে সেই সৌন্দর্য পাঁচ মিনিটের বেশি টিকবে না।

মাননীয় সভাপতি, রূপচর্চা সময়ের অপচয়—এটা প্রমাণ করতে আমার তেমন কষ্ট নেই।
কারণ, প্রতিদিন ভোরে উঠে আয়নার সামনে আধা ঘণ্টা চুলে জেল মারা, ভ্রু আঁকা, পাউডার লাগানো, লিপস্টিক ঠিক করা—এসব করার পর মানুষ বাইরে বেরোয়। অথচ সেই আধা ঘণ্টা যদি বই পড়া, শরীরচর্চা, কিংবা অন্তত ভালো ঘুমে ব্যবহার করা যেত, তাহলে জীবনে অনেক বেশি বাস্তব উপকার হতো।

একটা হাসির ঘটনা বলি। আমার এক আত্মীয় দেরি করে বিয়ের অনুষ্ঠানে পৌঁছালেন। কারণ? তিনি আয়নার সামনে এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে ভ্রু টানছিলেন। অবশেষে বিয়েতে পৌঁছে দেখলেন—বর কাবিননামায় সই করেও নববধূকে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে! এখন বলুন তো, সেই আত্মীয়ার সৌন্দর্যটা কারো কোন কাজে লাগল?

বিপক্ষ বন্ধু আরও বলেছেন— রূপচর্চা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
আমি বলি—আত্মবিশ্বাস যদি মুখে রঙ মেখে আসে, তবে সেটা আত্মবিশ্বাস নয়, সেটা হলো পাউডারবিশ্বাস। সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস আসে জ্ঞান, দক্ষতা ও মেধা থেকে, আয়নার রঙ-তুলির ঝলকানি থেকে নয়।

এবার আমি একটা প্রশ্ন রাখছি বিপক্ষ দলের উদ্দেশ্যে— যদি রূপচর্চা এতই কার্যকর হয়, তবে পরীক্ষার হলে প্রথম বেঞ্চে বসে যারা মেকআপে ঝলমল করে, তারা কেন সবসময় প্রথম হয় না? আর যারা সাধারণ-সিধে পোশাকে বসে পড়ে, তারা কেন ফলাফলে এগিয়ে থাকে?

মাননীয় সভাপতি, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট—
১. রূপচর্চা সময় নষ্ট করে, কাজে উপকার আনে না।
২. সমাজে কৃত্রিম মানসিকতা ছড়ায়।
৩. সাময়িক সৌন্দর্যের মোহে মানুষ আসল যোগ্যতা থেকে দূরে সরে যায়।

তাহলে আসুন আমরা স্বীকার করি— রূপচর্চা আসলেই সময়ের অপচয়, আর এর পেছনে ব্যয় করা প্রতিটি মিনিট হলো জীবনের আসল অগ্রগতি থেকে পিছিয়ে পড়া।

সবাইকে ধন্যবাদ।আমি আমার বক্তব্য এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করছি।

রূপচর্চা সময়ের অপচয়’ বিষয়ক রম্য বিতর্কে বিপক্ষে দ্বিতীয় বক্তার বক্তব্য

মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত দর্শকবৃন্দ এবং আমার প্রিয় পক্ষ-বিপক্ষের বিতার্কিক বন্ধুগণ— আপনাদের সবার প্রতি জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমি আজকের আলোচনায় বিপক্ষ দলের দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছি।

প্রথমেই পক্ষ দলের দ্বিতীয় বক্তার করা প্রশ্নের উত্তর দিই।
তারা বলেছেন—যদি রূপচর্চা এত কার্যকর হয়, তবে পরীক্ষার হলে যারা মেকআপে ঝলমল করে তারা কেন সবসময় প্রথম হয় না?”

বন্ধু, খুব সুন্দর প্রশ্ন। আমার উত্তর হলো— পরীক্ষার হলে তো কেউ রূপচর্চা করে না যে প্রথম হবে! সেখানে গুণই মূখ্য। কিন্তু সমাজ, চাকরির ইন্টারভিউ, বিবাহ অনুষ্ঠান, এমনকি অফিস মিটিং—এই সব ক্ষেত্রেই প্রথম ইমপ্রেশনটাই সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। সেখানেই রূপচর্চার প্রয়োজনীয়তা। পরীক্ষার হলে গুণ জরুরি, কিন্তু জীবনের পরীক্ষায় গুণের সঙ্গে রূপও অনেক সময় সমান গুরুত্ব বহন করে।

এবার আসি মূল আলোচনায়।পক্ষের বন্ধুরা বলছেন—রূপচর্চা সময় নষ্ট করে। কিন্তু মাননীয় সভাপতি, একটু ভেবে দেখুন—
যদি রূপচর্চা সময়ের অপচয় হয়, তবে প্রতিদিন আমরা দাঁত মাজি কেন? গোসল করি কেন? চুল আঁচড়াই কেন? এগুলোও তো রূপচর্চার অংশ! আমরা কি একেবারে এলোমেলো চুল, কুঁচকানো জামা পরে অফিস, স্কুল বা কলেজে যাই? না, কারণ এতে সমাজ আমাদেরকে অগোছালো, অলস এবং অসচেতন মনে করবে। তাই রূপচর্চা হলো শৃঙ্খলা ও ভদ্রতার অংশ, সময়ের অপচয় নয়।

একটা বাস্তব হাসির ঘটনা বলি— আমার এক বন্ধু প্রতিদিন রাস্তায় বেরোতো এমন অবিন্যস্ত চেহারা নিয়ে যে, একদিন এক ভিক্ষুক তাকে দেখে বলেছিল—“ভাই, আপনার কাছেই যদি সাহায্য চাই, তবে আমার অবস্থা তো আরও খারাপ!”
এখন বলুন তো, সামান্য রূপচর্চা করে পরিচ্ছন্ন দেখালে কি এই বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হতো?

মাননীয় সভাপতি, রূপচর্চা আসলে আমাদের আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় করে।
যখন একজন মানুষ সুন্দরভাবে পরিপাটি হয়ে বের হয়, তখন সে নিজেকে শক্তিশালী, প্রস্তুত ও আত্মবিশ্বাসী মনে করে। পক্ষের বন্ধুরা একে “পাউডারবিশ্বাস” বলেছেন। আমি বলব—পাউডার না হোক, অন্তত বিশ্বাস তো দিল! অনেকেই হয়তো জ্ঞানী, কিন্তু উপস্থাপনায় দুর্বল। রূপচর্চাই সেই দুর্বলতাকে ঢেকে আত্মবিশ্বাস জোগায়।

এখন আমি পক্ষ দলের কাছে একটা প্রশ্ন রাখতে চাই— আপনারা বলেন রূপচর্চা সময়ের অপচয়। যদি তাই হতো, তবে কেন বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের “ড্রেস কোড” এবং “গ্রুমিং স্ট্যান্ডার্ড” মেনে চলতে বাধ্য করে? শুধুই কি সময় নষ্ট করার জন্য? নাকি তারা বোঝে, সুন্দর উপস্থাপন মানেই ব্র্যান্ডের সুনাম ও সাফল্য?

মাননীয় সভাপতি, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট—
১. রূপচর্চা সময়ের অপচয় নয়, বরং ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণতার অংশ।
২. এটি আত্মবিশ্বাস জোগায়, সমাজে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।
৩. জীবনের অনেক বাস্তব ক্ষেত্রে রূপচর্চা প্রথম ইমপ্রেশনে সাফল্যের দরজা খুলে দেয়।

অতএব, আমরা দৃঢ়ভাবে বলছি— রূপচর্চা সময়ের অপচয় নয়, বরং জীবনের অপরিহার্য অংশ।

সবাইকে ধন্যবাদ। আমি আমার বক্তব্য এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করছি।

রূপচর্চা সময়ের অপচয়’ বিষয়ক রম্য বিতর্কে পক্ষে তৃতীয় বক্তা / দলনেতার বক্তব্য

মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, প্রিয় দর্শক এবং আমার পক্ষ-বিপক্ষের বিতার্কিক বন্ধুগণ—
আপনাদের প্রতি জানাই উষ্ণ শুভেচ্ছা। আমি আজ পক্ষে তৃতীয় বক্তা তথা দলনেতা হিসেবে উপস্থিত হয়েছি।

প্রথমেই বিপক্ষ দলের দ্বিতীয় বক্তার করা প্রশ্নের উত্তর দিই। তারা বলেছেন—যদি রূপচর্চা সময়ের অপচয় হয়, তবে কেন বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের ড্রেস কোড ও গ্রুমিং স্ট্যান্ডার্ড মানতে বাধ্য করে?”

বন্ধু, খুব সুন্দর প্রশ্ন। তবে আমার উত্তর হলো— ড্রেস কোড আর রূপচর্চা এক জিনিস নয়। ড্রেস কোড মানে পরিপাটি পোশাক পরে পরিচ্ছন্ন থাকা। কিন্তু রূপচর্চা মানে ঘন্টার পর ঘন্টা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু টানা, চুলে হেয়ার জেল মারা, লিপস্টিক-ফাউন্ডেশন মাখা। অফিসে ড্রেস কোড চাই কর্মীর শৃঙ্খলার জন্য, কিন্তু বিউটি পার্লারে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মক্ষমতার প্রমাণ নয়, বরং সময় অপচয়ের সাক্ষ্য।

মাননীয় সভাপতি, আমার আগের বক্তারা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছেন—রূপচর্চা মানুষের মূল্যবান সময় কেড়ে নেয়, যা পড়াশোনা, কাজ বা আত্মোন্নয়নে ব্যয় হতে পারত। আমি এখানে কয়েকটি দৃঢ় যুক্তি যোগ করতে চাই।

প্রথমত, রূপচর্চা হলো এক ধরনের কৃত্রিমতা। কেউ যতই সাজুক, দিন শেষে যদি চরিত্র বা মেধা খারাপ হয় তবে সেই সাজসজ্জা পাঁচ মিনিটও কাজে আসে না। যেমন—একটা বাস যদি বাইরে চকচকে রঙ করা থাকে কিন্তু ভেতরে ইঞ্জিন খারাপ, তবে সেটি গন্তব্যে পৌঁছাবে না।

দ্বিতীয়ত, রূপচর্চা সময় নষ্টের পাশাপাশি মানসিক চাপও সৃষ্টি করে। “কেমন দেখাচ্ছে? লিপস্টিক টিকে আছে তো? হেয়ারস্টাইল ঠিক আছে তো?”—এসব ভাবতে ভাবতেই আসল কাজে মনোযোগ হারিয়ে যায়। ফলে কর্মদক্ষতা কমে যায়।

তৃতীয়ত, রূপচর্চা মানুষকে ভোগবাদী করে তোলে। নতুন প্রসাধনী, নতুন ফ্যাশন, নতুন হেয়ার কালার—এসবের পেছনে ছুটতে গিয়েই মানুষ আসল উন্নতি, অর্থাৎ জ্ঞানচর্চা ও সৃজনশীলতাকে ভুলে যায়।

এখন একটি ছোট্ট হাসির ঘটনা বলি। আমাদের ক্লাসের এক সহপাঠী পরীক্ষার দিন সকাল ৮টা থেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। চুলের স্টাইল বারবার ঠিক করছে, জামার ভাঁজ সোজা করছে। অবশেষে পরীক্ষার হলে ঢুকে যখন প্রশ্নপত্র পেল, তখন তার চুল তো স্টাইলিশ ছিল বটে, কিন্তু খাতা ছিল সম্পূর্ণ ফাঁকা! এখন বলুন তো, সেই সাজসজ্জা দিয়ে কি পরীক্ষক খাতায় নম্বর লিখে দিলেন?

মাননীয় সভাপতি, বিপক্ষ বন্ধুরা বলছেন—রূপচর্চা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। আমি বলছি—আত্মবিশ্বাস মেকআপে নয়, মেধায়।
রূপচর্চার উপর দাঁড়ানো আত্মবিশ্বাস হলো বেলুনের মতো—একটু সূঁচ লাগলেই ফুটো হয়ে যায়। কিন্তু মেধার উপর দাঁড়ানো আত্মবিশ্বাস হলো পাহাড়ের মতো—ঝড়-ঝাপটায়ও নড়ে না। শেষে আমি একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিতে চাই আমার বিপক্ষ বন্ধুদের উদ্দেশ্যে— যদি রূপচর্চা সত্যিই সময়ের সঠিক ব্যবহার হয়, তবে কেন পৃথিবীর সবচেয়ে সফল বিজ্ঞানী, চিন্তাবিদ বা নোবেলজয়ীদের মধ্যে কাউকে আমরা বিউটি কনটেস্টে অংশ নিতে দেখি না?

মাননীয় সভাপতি, আমাদের পক্ষে প্রমাণিত—
১. রূপচর্চা মূল্যবান সময় নষ্ট করে।
২. এটি কৃত্রিম ও ক্ষণস্থায়ী।
৩. জীবনের আসল উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে। অতএব, আমরা দৃঢ়ভাবে বলছি— রূপচর্চা নিছকই সময়ের অপচয়।

সবাইকে ধন্যবাদ। আমি আমার বক্তব্য এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করছি।

রূপচর্চা সময়ের অপচয়’ বিষয়ক রম্য বিতর্কে বিপক্ষে তৃতীয় বক্তা / দলনেতার বক্তব্য

মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, প্রিয় দর্শক এবং আমার পক্ষ-বিপক্ষের বিতার্কিক বন্ধুগণ—
আপনাদের সবার প্রতি জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আমি আজ বিপক্ষ দলের তৃতীয় বক্তা তথা দলনেতা হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করতে দাঁড়ালাম।

প্রথমেই পক্ষ দলের দলনেতার ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নের উত্তর দিই। তারা জিজ্ঞেস করেছেন—যদি রূপচর্চা সময়ের সঠিক ব্যবহার হতো, তবে কেন পৃথিবীর সবচেয়ে সফল বিজ্ঞানী, চিন্তাবিদ বা নোবেলজয়ীদের আমরা বিউটি কনটেস্টে দেখি না?” বন্ধু, আমাদের উত্তর খুব সরল— নোবেলজয়ীরা বিউটি কনটেস্টে অংশ নেননি বলেই তারা রূপচর্চাহীন ছিলেন, এমন তো নয়! পরিচ্ছন্ন পোশাক, পরিপাটি চেহারা, ব্যক্তিত্বপূর্ণ উপস্থিতি ছাড়া কি তারা বিশ্বমঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলার সাহস পেতেন? রূপচর্চা মানে শুধু “বিউটি কনটেস্ট” নয়; বরং নিজেকে উপস্থাপনযোগ্য করে তোলা। একজন বিজ্ঞানীকে যদি এলোমেলো চুল, অগোছালো পোশাকে নোবেল নিতে পাঠানো হতো, সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হতো—“নোবেলজয়ী না, ভিখারি এসে পুরস্কার নিলেন!” মাননীয় সভাপতি, আমার আগের দুই বক্তা যথেষ্ট পরিষ্কার করে প্রমাণ করেছেন—রূপচর্চা সময়ের অপচয় নয়। আমি আজ দলনেতা হিসেবে কিছু নতুন যুক্তি সংযোজন করব।

প্রথমত—রূপচর্চা হলো সামাজিক দায়িত্ব।
আপনি যেমন চান না, আপনার পাশে দাঁড়ানো কেউ দুর্গন্ধযুক্ত জামা বা এলোমেলো চুলে থাকুক, অন্যেরাও তেমনি আপনার কাছ থেকে পরিচ্ছন্ন রূপ আশা করে। পরিচ্ছন্নতা ও পরিপাটি থাকা শুধু নিজের নয়, আশেপাশের মানুষেরও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে।

দ্বিতীয়ত—রূপচর্চা আত্মবিশ্বাসের মূল চাবিকাঠি।
পক্ষ দল বলেছে, আত্মবিশ্বাস মেকআপে নয়, মেধায়। আমিও মানি—কিন্তু মেধা প্রকাশের জন্য দরকার উপস্থাপন। ধরুন, একটি বই যদি ধুলোমাখা, ছেঁড়া কভারে থাকে তবে পাঠক হয়তো সেটি হাতে নিতেই চাইবে না। অথচ একই বই ঝকঝকে কভারে থাকলে পাঠকের আগ্রহ বাড়ে। রূপচর্চা ঠিক সেই কভারের মতো—যা ভেতরের মেধাকে তুলে ধরতে সাহায্য করে।

তৃতীয়ত—রূপচর্চা সময় বিনিয়োগ, অপচয় নয়।
একজন শিক্ষার্থী যখন প্রতিদিন আধা ঘণ্টা পড়াশোনা করে, সেটা যেমন তার ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ; তেমনি প্রতিদিন কয়েক মিনিট পরিচ্ছন্ন থাকা, পোশাক পরিপাটি রাখা ভবিষ্যতের সাফল্যের বিনিয়োগ। কারণ, চাকরি ইন্টারভিউ থেকে শুরু করে সামাজিক সম্পর্ক—সবখানেই প্রথম ইমপ্রেশন গুরুত্বপূর্ণ।

একটা ছোট্ট হাসির ঘটনা শেয়ার করি। আমার এক বন্ধু ইন্টারভিউ দিতে গেলো কুঁচকানো শার্ট, অগোছালো চুল নিয়ে। বস তাকে দেখেই বললেন—“আপনি কি চাকরির ইন্টারভিউতে এসেছেন, নাকি রাত্রে ঘুম থেকে উঠে সরাসরি চলে এসেছেন?”
অন্যদিকে, একই দিনে আরেক প্রার্থী সামান্য রূপচর্চা করে গেলেন—পরিপাটি পোশাক, হালকা সুগন্ধি। ফলাফল? দ্বিতীয়জন চাকরি পেলেন, প্রথমজন পেলেন শিক্ষা! এবার আমি পক্ষ দলের কাছে প্রশ্ন রাখছি— আপনারা বলেন, রূপচর্চা কৃত্রিম। তাহলে কি নিজের জামা ইস্ত্রি করা, চুল আঁচড়ানো, বা সাবান দিয়ে মুখ ধোয়া—এসবও কৃত্রিম? যদি তাই হয়, তবে আমাদের সবার প্রতিদিনের গোসলই কৃত্রিমতা!

মাননীয় সভাপতি, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট—
১. রূপচর্চা সামাজিক ভদ্রতা ও দায়িত্ববোধ।
২. এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং প্রথম ইমপ্রেশনে সাফল্যের দরজা খুলে দেয়।
৩. রূপচর্চা সময়ের অপচয় নয়, বরং সঠিক বিনিয়োগ। অতএব, আমরা বিপক্ষ দল দৃঢ়ভাবে বলছি— রূপচর্চা সময়ের অপচয় নয়, বরং জীবনের অপরিহার্য অংশ।

সবাইকে ধন্যবাদ। আমি আমার বক্তব্য এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করছি।