প্রিয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী বন্ধুরা, ৯ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের আলোচনায় আপনাদের স্বাগতম জানাচ্ছি । ২০২১ সালে বাংলাদেশে নতুন একটি শিক্ষাক্রম রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এই রূপরেখা অনুসারে প্রতিটি বিষয়ের জন্য বিষয়ভিত্তিক এবং শ্রেণিভিত্তিক কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে যেগুলো অর্জিত হবে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মাধ্যমে।
নতুন এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায় যোগ্যতাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে মূলত চারটি উপাদানের সমন্বয়ে – জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গি কী তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে এই শিক্ষাক্রম রূপরেখায়। আর এই জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ এবং দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে গঠিত যোগ্যতাগুলো শিক্ষার্থীরা অর্জন করবে হাতে কলমে কাজ করে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে বা অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মাধ্যমে।
অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মূলত চার ধাপ বিশিষ্ট এক একটি শিখন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাবে, যার ধাপগুলো হলো – ১। বাস্তব অভিজ্ঞতা ২। প্রতিফলনমূলক পর্যবেক্ষণ ৩। বিমূর্ত ধারণায়ন ৪। সক্রিয় পরীক্ষণ।
প্রযুক্তির প্রসারের কারণে আমাদের জীবন যাত্রার গতি-প্রকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বদলে যাচ্ছে জীবন-যাপন, লেনদেন, যোগাযোগ পেশা এবং বিনোদনের মাধ্যম। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীর যেকোনো পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকা চাই।
এখন আমাদের পড়াশোনা আর জানা শুধু পাঠ্য বইয়ে সীমাবন্ধ নেই, জানার পরিধি বিস্তার করতে আমাদের তথ্য নিতে হয় ইন্টারনেট এবং অন্যান্য মাধ্যম থেকে। যে কারণে কার্যকরভাবে যথাযথ তথ্য আদান প্রদান করতে পারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।
৯ম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য দশটি যোগ্যতা অর্জনের কথা বলা হয়েছে যেগুলো শিক্ষার্থীরা ছয়টি শিখন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অর্জন করবে।
পাঠ্য বইটি সহজে দেখতে ও ডাউলোড করতে এই লিংকে ক্লিক করুন। (Download)
শিখন অভিজ্ঞতা-১ ; সেশন-১ (সত্য অনুসন্ধান)
এই সেশনের প্রধান কাজগুলো-পাঠ্যবই এ উল্লেখিত তিনটি কাল্পনিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ, ঘটনার প্রেক্ষিতে সঠিক তথ্য অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া অনুমান, ভুল তথ্য যাচাই এর ওয়েবসাইট থেকে কয়েকটি সংবাদ/ আর্টিকেল পর্যালোচনা।
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, প্রথমে তোমরা তোমাদের পাঠ্য বইয়ের শুরুতে দেওয়া ‘সুপ্রিয় শিক্ষার্থী’ নামক পাঠটুকু পড়ে নাও। ‘শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথা’ অংশটির একটি সারমর্ম তোমাদের সম্মুখে উপস্থাপন করছি।
এখন আমাদের পড়াশোনা শুধুমাত্র পাঠ্য বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে নতুন কিছু শিখতে হবে, জানতে হবে এবং অনুধাবন করতে হবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি এ বিষয়টা অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা নিরাপদে ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ব্যবহার করতে সক্ষম হবো, সেইসাথে সাইবার ঝুঁকি সংক্রান্ত ধারণা পাবো। নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবো, নাগরিক সেবার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে ধারণা পাবো। প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে আমরা সহজ সরল সমস্যার সমাধান করতে পারবো।
এক্ষেত্রে তোমরা তোমাদের পাঠ্য বইয়ে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু কাজ নিজেদেরকে একা করতে হবে, পাঠ্য বইয়ে দেওয়া প্রতিটি ছক পূরণ করতে হবে। আবার কিছু কাজ শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহযোগিতায় সম্পন্ন করতে হবে। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতাও এক্ষেত্রে নিতে পারবে। তোমরা তোমাদের আশেপাশের সবকিছুকে এখন থেকে অনুসন্ধানের চোখে দেখতে হবে। যৌক্তিক প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।
আজকের পৃথিবীতে জ্ঞানের পরিধি এত বেশি জানার সুযোগ এতটাই ব্যাপক যে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে টিকে থাকতে হলে আমাদেরকে জানার পরিধি বাড়াতে হবে সেই সাথে জানার পদ্ধতিও পরিবর্তন করতে হবে। আমরা শুধুমাত্র প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে পরীক্ষার খাতায় লেখার মধ্যে নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ রাখি তাহলে অন্যান্য দেশের নাগরিকের তুলনায় আমরা পিছিয়ে থাকবো।
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের পাঠ্য বইয়ে সেশন-১ এ সত্য অনুসন্ধান পাঠে ভুল তথ্যের তিনটি নমুনা দেওয়া হলো সেগুলো আমরা ভালো করে পড়ে প্রদত্ত ছকগুলো আমাদের পূরণ করতে হবে।
পরিস্থিতি-১ (পাঠ্য বইয়ের পৃষ্ঠা-২)
পরিস্থিতি-১ (সমাধান)
বাসের ওই অসাধু লোকটি তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার এর মাধ্যমে স্বনামধন্য কোন পত্রিকার লোগো নকল করে এবং একটি নকল ওয়েবসাইট তৈরি করেছে। এরপর সেই ওয়েবসাইটে নিজের ইচ্ছামতো নকল তথ্য দিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে। লোকটি যে নিয়োগপত্র দেখিয়েছেন সেটি সে নিজে ব্যাংকের লোগো সম্পৃক্ত করে তৈরি করেছে।এভাবে অসাধু লোকটি সাগরকে বিভ্রান্ত করেছে।
পরিস্থিতি-২ (পাঠ্য বইয়ের পৃষ্ঠা-২)
পরিস্থিতি-২ (সমাধান)
ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে ওই অসাধু ব্যক্তি স্বনামধন্য টেলিভিশনের লোগো দিয়ে একটি নকল ভিডিও তৈরি করেছে। এরপর নিজেই একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেখানে সংবাদটি প্রচার করেছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ফর্ম তৈরি করে আবেদনের নামে তথ্য গ্রহণ করেছে। এভাবে অসাধু ব্যক্তি সংবাদ বিকৃত করে জ্যোতির সাথে প্রতারণা করেছে।
পরিস্থিতি-৩ (পাঠ্য বইয়ের পৃষ্ঠা-৩)
পরিস্থিতি-৩ (সমাধান)
ফটোএডিটিং সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে কোন একটি স্বনামধন্য পত্রিকার লঘু-কার্ড ব্যবহার করে তার সাথে অপ্রাসঙ্গিক ছবি সম্পৃক্ত করে উক্ত সংবাদটিকে বিকৃত বা নকল করা হয়েছে।