২০৪৫ সালের মধ্যে মানুষের অধিকাংশ চাকরি দখলে নেবে AI!২০৪৫ সালের মধ্যে মানুষের অধিকাংশ চাকরি দখলে নেবে AI!

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) দখলে যাচ্ছে কর্মসংস্থান !

বিশ্বব্যাপী দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) ও রোবটিক্স প্রযুক্তি। প্রযুক্তিবিদ ও ভবিষ্যৎ গবেষকদের মতে, আগামী দুই দশকের মধ্যেই এই প্রযুক্তির প্রভাব এতটাই বিস্তৃত হবে যে, মানুষের প্রচলিত চাকরির প্রয়োজন অনেকাংশেই বিলীন হয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ২০৪৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে কর্মসংস্থান খাতে এক বড়সড় বিপ্লব ঘটতে যাচ্ছে। অধিকাংশ পেশায় মানুষের জায়গা দখল করে নেবে বুদ্ধিমান যন্ত্র, অটোমেশন ও মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি।

ইতিহাস যেমন বদলেছে, এবার পালা শ্রমশক্তির !

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতিহাসের নানা সময়ে প্রযুক্তির আবির্ভাবে মানুষ নানা পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে। যেমন: গাড়ির আগমনে ঘোড়ার গাড়ির যুগ শেষ হয়েছে, বিদ্যুতের আলো এসে গ্যাস ল্যাম্পকে অপ্রয়োজনীয় করে দিয়েছে, কিংবা ডিজিটাল ক্যামেরা কোডাকের মতো প্রতিষ্ঠানকে ইতিহাসের পাতায় ঠেলে দিয়েছে।

ঠিক তেমনভাবেই, এবার পালা মানুষের শ্রমের—এমনটাই মনে করছেন ভবিষ্যৎ বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, যেকোনো কাজ যদি একটি মেশিন কম খরচে, বেশি দক্ষতায় এবং নির্ভুলভাবে করতে পারে, তাহলে সেই কাজে মানুষকে প্রাধান্য দেওয়ার যৌক্তিকতা হারাবে।

AI ঢুকছে প্রতিটি পেশায়, কোনটিই আর নিরাপদ নয় ?

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন এমন সব স্মার্ট মেশিন তৈরি করছে, যেগুলো চিকিৎসা, আইন, শিক্ষা, বিপণন থেকে শুরু করে এমনকি সৃজনশীল শিল্পেও কাজ করতে পারছে। অফিস সহকারী, গ্রাফিক ডিজাইনার, কনটেন্ট রাইটার, এমনকি প্রাথমিক আইনি সহায়তা পর্যন্ত এখন AI দিয়েই সম্ভব হচ্ছে।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কোম্পানি ইতোমধ্যে AI-ভিত্তিক টুল ব্যবহার করে খরচ কমাচ্ছে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো শিল্পেই হোক না কেন, AI ও রোবটিক্স আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে, এটা প্রায় নিশ্চিত।

AI যুগে মানুষের জন্য থাকবে কেবল ৩টি ক্ষেত্র :

যদিও AI মানুষের অনেক কাজ দখলে নিচ্ছে, তবুও কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যা এখনও পুরোপুরি যন্ত্র দিয়ে সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের আবেগ, মূল্যবোধ, এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট বোঝার ক্ষমতা যেখানে প্রয়োজন, সেইসব জায়গায় AI এখনও পিছিয়ে।

ভবিষ্যতে যেসব পেশা টিকে থাকবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তিনটি হল :

রাজনীতি ও নেতৃত্ব:
যেখানে মানুষের বিশ্বাস, চিন্তাভাবনা ও কৌশল দরকার—এ ধরনের সিদ্ধান্ত AI নিতে পারবে না।

নৈতিকতা ও সমাজসেবা:
নৈতিক ও মানবিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সহানুভূতি ও অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। যেমন—কোনো বিপর্যয়ে মানুষকে মানসিক সহায়তা দেওয়া, পরিবারভিত্তিক সিদ্ধান্ত, বা সামাজিক অসমতা মোকাবিলা।

সম্পর্কভিত্তিক পেশা:
মানবিক সংযোগ, যৌনতা, আবেগ এবং আত্মিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে AI কখনই মানুষের বিকল্প হতে পারবে না।

সুযোগ না বিপদ—কোন পথে যাচ্ছে বিশ্ব ?

এই AI বিপ্লব অনেকের মনে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি করলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে সঠিক পরিকল্পনা ও মানবকেন্দ্রিক নীতিমালার মাধ্যমে এই প্রযুক্তিকে মানবজাতির কল্যাণে কাজে লাগানো সম্ভব।

ভবিষ্যতে আমরা এমন এক ‘সুপার-অ্যাবান্ডেন্স’ যুগে প্রবেশ করতে পারি, যেখানে মানুষের পরিশ্রমের পরিবর্তে সৃজনশীলতা, অবসর ও মানসিক প্রশান্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবে যদি এই প্রযুক্তিগত পরিবর্তনকে ভুলভাবে পরিচালনা করা হয়, তাহলে সমাজে ব্যাপক বৈষম্য এবং ক্ষমতার একত্রীকরণ ঘটতে পারে—যেখানে কিছু ধনী ও প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

কীভাবে প্রস্তুত করতে হবে আগামী প্রজন্ম কে ?

এখন থেকেই যদি শিক্ষাব্যবস্থা, নীতিনির্ধারক প্রতিষ্ঠান এবং সমাজ সচেতন না হয়, তাহলে এই পরিবর্তন মানুষের জন্য সুযোগ নয়, বরং বিপদে পরিণত হবে। নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি-সচেতন এবং মানসিক ও নৈতিকভাবে প্রস্তুত করতে না পারলে, AI যুগে তারা টিকে থাকতে পারবে না।

অতএব, সময় এখনই—কীভাবে আমরা AI-কে গ্রহণ করব, কীভাবে আমাদের মানবিক গুণাবলিকে সমুন্নত রাখব, সেটিই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের সমাজ, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতির রূপরেখা।

পরিশেষে :

যেখানে একদিকে চাকরি হারানোর ভয়, অন্যদিকে সৃজনশীলতা ও নৈতিকতা মানুষকে মানুষের আসনে রাখবে। AI হয়তো দক্ষতায় মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে, কিন্তু আবেগ, নীতি ও সম্পর্কের জায়গায় মানুষই শেষ কথা। এখন দেখা যাক, বিশ্ব এই রূপান্তরের মুখে কতটা মানবিক এবং বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নেয়।

কী ভাবছেন আপনি ?

আপনার কি মনে হয় AI আমাদের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলবে, নাকি এটি আমাদের মুক্তির পথ? কমেন্টে জানান আপনার মতামত!

তথ্য সংগ্রহে-
এম. কে. আলম।