আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ, ayatul kursi bangla uccharon,আয়াতুল কুরসি বাংলা অর্থ, আয়তুল কুরসির ফজিলত,

আজকের ব্লগে আমরা পবিত্র আল-কোরআনের এক মহিমান্বিত আয়াত- আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ আপনাদের জন্য উপস্থাপন করব।

আয়াতুল কুরসি পবিত্র আল-কোরআনের সূরা আল-বাকারার ২৫৫ তম আয়াত। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সমগ্র বিশ্বজগতে একমাত্র আল্লাহই পূর্ণ ক্ষমতা ও একক আধিপত্যের অধিকারী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার সাথে মহাবিশ্বের কোনো কিছুই তুলনীয় নয় বলে উপস্থাপিত হয়েছে। এ আয়াতটি সমগ্র বিশ্বের মানুষের সবচেয়ে বেশি পঠিত ও মুখস্থ করা একটি পুণ্যবান ও মহিমান্বিত আয়াত। যার মাধ্যমে অনেকে দুষ্ঠু আত্মা ও জ্বীন থেকে নিজেদের রক্ষাও করে থাকে।

আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম । লা-তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা-ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান্ যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়ালামু মা-বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ কুরসিহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্ব, ওয়ালা- ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যুল আজিম।

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ:

“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী/সবকিছুর ধারক। তাঁকে কোনো তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে তাঁর নিকটে সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা পোষণ করেন তা ব্যতীত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্ত্বাবধান করতে তাঁর কষ্ট হয় না। তিনিই সর্বোচ্চ ও সর্বমহান।”

আয়াতুল কুরসির ফজিলত :

আয়াতুল কুরসির তিলাওয়াতের ফজিলত অসীম। মুমিনদের উচিত প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় এই মহিমান্বিত আল্লাহর বাণীকে বার বার তিলাওয়াত করা।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত:

হযরত আবু উমামা (রা:) থেকে বর্ণিত -রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ইরশাদ করেছেন- “যে ব্যক্তি ফরয নামাজের পর আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করবেন তার জন্য জান্নাতে যাওয়ার পথে একমাত্র বাধা থাকবে মৃত্যু।” (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ-নাসায়ী-হাদিস-১০০)। 

তাই আমাদের উচিত প্রতিটি ফরয নামাজ আদায়ের পর দুই-এক মিনিট জায়নামাজে বসে এই পবিত্র আয়াত পাঠ করা। আরবিতে পড়তে না পারলেও আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ দেখে পাঠ করা উচিত।

ঘুমানো সময় আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত:

এ প্রসঙ্গে সহিহ বুখারী শরিফে একটি ঘটনা বর্ণিত আছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন। আল্লাহর রাসূল (সা:) আমাকে রমজানে সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে মানুষের দেওয়া খেজুর দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। রাতে এক আগন্তুক এসে সেই খেজুরের স্তূপ থেকে মুুঠি ভরে না বলে নিতে লাগল। আমি তাকে তখন ধরে ফেললাম। তিনি অত্যন্ত মিনতি করে বলতে লাগলেন- আমি অভাবগ্রস্ত, পরিবার আমার না খেয়ে আছেন, আমাকে ক্ষমা করুন এবং ছেড়ে দিন। তার কথা শুনে হযরত আবু হুরায়রা (রা:) তাকে ছেড়ে দিলেন। 

সকালে নবীজির সাথে হযরত আবু হুরায়রার দেখা হলে, নবীজি বললেন-আবু হুরায়রা (রা:) তোমার গত রাতের বন্দীর কি অবস্থা! তখন জবাবে আবু হুরায়রা (রা:) নবীজিকে বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার অভাব-অনটন ও পরিবারের ভারগ্রস্ততার কথা বলাতে আমার দয়া হলো, তাই তাকে ছেড়ে দিলাম। নবীজি আবু হুরায়রা (রা:)কে বললেন- দেখো, সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, সে আবারো আসবে।

আবু হুরায়রা (রা:) মনে মনে ভাবলেন নবী করিম (সা:) যখন বলেছেন নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তিটি আবারো আসবেন। আবু হুরায়রা (রা:) রাতে সে ব্যক্তির অপেক্ষায় রইলেন। তিলি লক্ষ করলেন সেই আগুন্তুক ব্যক্তিটি আবারো আসলো এবং না বলে খাদ্যবস্তু খেজুর মুঠি ভরে নিতে লাগল। তখন আবু হুরায়রা (রা:) সেই ব্যক্তিকে আবারো ধরে ফেললেন এবং  বললেন আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে হাজির করবই। 

সে ব্যক্তিটি আবারো মিনতি করে বলতে লাগল- আমি ও আমার পরিবার অভাবগ্রস্ত আমাকে ছেড়ে দিন, দয়া করুন। তার কথা শুনে আবু হুরায়রা (রা:) তাকে আবারো ছেড়ে দিলেন। সকালে আবারো নবীজি আবু হুরায়রা (রা:)কে জিজ্ঞাসা করলেন- তোমার বন্দীর কী খবর? জবাবে আবু হুরায়রা (রা:) নবীজিকে বললেন- লোকটি আবারো অভাবগ্রস্ততার দোহাই দিলেন, তাই আমার দয়া হলো আবারো তাকে ছেড়ে দিলাম। আবু হুরায়রা (রা:)-এর জবাবে নবী করিম(সা:) বললেন- সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে। দেখো, সে আবারো আসবে।

তৃতীয়বার লোকটি আবারো আসাতে আবু হুরায়রা (রা:) লোকটিকে ধরে ফেললেন এবং বললেন তুমি বলেছো আর আসবে না কিন্তু আবারো তুমি এসেছ। আমি তোমাকে এবার ছাড়বো না। লোকটি আবু হুরায়রা (রা:)কে বললেন আমাকে আপনি ছেড়ে দিন। আমি আপনাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেব যার দ্বারা আল্লাহ আপনাকে উপকৃত ও নিরাপদ রাখবেন।

আবু হুরায়রা (রা:) বললেন কী সে কথা? লোকটি বললেন-আপনি প্রতিরাতে যখন বিছানায় যাবেন তখন আল্লাহর বাণী আয়াতুল কুরসি পাঠ করবেন। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য সকাল পর্যন্ত একজন রক্ষাকর্তা নিযুক্ত করবেন। তার বদৌলতে আপনি যাবতীয় অনিষ্ট থেকে আপনি মুক্ত থাকবেন। একথা শুনে হযরত আবু হুরায়রা(রা:) তাকে ছেড়ে দিলেন। পরদিন সকালে নবীজি তাকে আবারো প্রশ্ন করাতে তিনি বললেন- লোকটি আমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা শিখিয়ে দিলেন যার দ্বারা আল্লাহ আমাকে উপকৃত করবেন। তাই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

নবীজি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, সে কথাগুলো কী? হযরত আবু হুরায়রা (রা:)বললেন- লোকটি বলল ‘ আমি যখন বিছানায় যাব তখন আল্লাহর পবিত্র বাণী আয়াতুল কুরসি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করতে। সে বলল, আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত আমার জন্য এক রক্ষাকর্তা নিযুক্ত থাকবেন আর সকাল পর্যন্ত কোনো শয়তান আমার কাছে ভিড়বে না এবং যাবতীয় অনিষ্ট থেকে আপনি নিরাপদ থাকবেন।  নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- লোকটি এবার তোমাকে সত্য কথাই বলেছে। যদিও সে একজন মিথ্যুক ছিল।

তুমি কী জানো সে ব্যক্তিটি কে ছিল? তিনি বললেন না। আমি তাকে চিনি না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- সে ছিল একজন শয়তান। যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানো সময় আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করবেন আল্লাহ রহমতে সকল অনিষ্ট থেকে সে ব্যক্তি মুক্ত থাকবেন। তাই আমাদের সকলের উচিত প্রতিদিন রাতে ঘুমানো সময় এই মহিমান্বিত আয়াত তিলাওয়াত করা। আরবিতে পড়তে না পারলেও আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ দেখে পাঠ করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *