বাংলাদেশে মুঠোফোনের গ্রাহকসংখ্যা আমাদের মোট জনসংখ্যারও বেশি। এর অর্থ হচ্ছে বয়স বা অন্য কোনো কারণে যদি আমরা এখনও মুঠোফোন নাও পাই, আমাদের আশে পাশে অনেকেই বা পরিবারের অনেক সদস্যই এই মুহূর্তে মুঠোফোন ব্যবহার করছে, তাও অনেকের একই সাথে একাধিক নম্বর রয়েছে। আমরাও হয়তো কিছুদিনের মধ্যে এটি ব্যবহারের সুযোগ পাব। কাজেই এখন থেকেই মুঠোফোনের নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে সচেতন হওয়া দরকার।
একটি আধুনিক বা স্মার্ট মুঠোফোন, যেটি স্মার্টফোন নামেও পরিচিত, দেখতে নিচের মত। এর গঠন, কার্যকারিতা, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যেই একেক ব্র্যান্ডের একেক মডেল ও ভার্সনের মুঠোফোন বাজারে চলে আসে। যেটি আগের চেয়ে আরো বেশি গতির ও কার্যকরী হয়।
অসৎ উদ্দেশ্যে আমাদের মুঠোফোন যখন কেউ দখল করে তখন বিভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে আমাদের অ্যাকাউন্টে সে প্রবেশ করে। এমনকি সফটওয়্যার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলোরও নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে যায়।
আমাদের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তারা বিভিন্ন জনকে বিভ্রান্তিমূলক বার্তা পাঠাতে থাকে। কখনো কখনো আমাদের নাম নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কিছু দাবি করে বা আর্থিক সহায়তা চায়। তাছাড়া আমাদের জন্য অপমানজনক বা কোন নাশকতাজনক কাজে দায়ী হতে পারি এমন কার্যকলাপও তারা করতে পারে। আমাদের মুঠোফোন বা ডিভাইসে থাকা ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্যও তারা ফাঁস করে দিতে পারে যা আমাদের জন্য খুবই অপমানজনক হতে পারে।
এবার আমরা প্রত্যেকটি ছবির নিচে খালি জায়গায় লিখব এই সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর অসতর্কতা কী ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে তৈরি করতে পারে।
ছবি:১ (ক্যামেরা)
ফোনের ক্যামেরা দিয়ে আমরা নিজেদের এবং পরিবারের সদস্যদের ছবি তুলে থাকি। তবে ছবি তোলার ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক হতে হবে, যাতে করে আমরা কোনো অতি-ব্যক্তিগত ছবি না তুলি । কারণ দুর্ভাগ্যবশত যদি ফোনটি হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায়, অথবা ফোনের গ্যালারীর অ্যাক্সেস যদি হ্যাকারদের কাছে চলে যায়, তাহলে এই ব্যক্তিগত ছবিগুলো তারা খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে ।
ছবি-২: (প্যাটার্ন লক)
স্মার্টফোনে প্যাটার্ন লক খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি একটি ফিচার। এই ফিচারটির মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত ব্যবহারকারীর হাত থেকে ফোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। তাই প্যাটার্ন লক সেট করার সময়ে যথাসম্ভব জটিল প্যাটার্ন দিতে হবে, যাতে করে অন্য কেউ তা খুলতে না পারে । এতে করে অনাকাঙ্খিত কেউ ফোনের লক খুলতে পারবে না এবং ফোনের ভেতরে থাকা তথ্যগুলোও নিরাপদে থাকবে ।
ছবি-৩: (ওয়াই-ফাই)
আমরা ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে থাকি । কিছু কিছু জায়গায় ফ্রি ওয়াই- ফাই অ্যাক্সেস দেওয়া হয়। তবে অপরিচিত যেকোনো ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে ফোন কানেক্ট করার পূর্বে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। কারণ ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমেও ফোনে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাস ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব । তাই আমরা নিরাপদ ওয়াই-ফাই কানেকশন ব্যতীত অন্য কোনো নেটওয়ার্কে ফোন কানেক্ট করব না।
ছবি-৪: (হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেজিং অ্যাপ)
আমরা আমাদের দৈনন্দিন যোগাযোগের প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার বা অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপগুলো ব্যবহার করে থাকি। এসব অ্যাপগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। অনেকে আমাদের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে মেসেজে বিভিন্ন লিংক পাঠাতে পারে। পুরোপুরো নিশ্চিত না হয়ে উক্ত লিংকে কোনোভাবেই ক্লিক করা যাবে না।
মুঠোফোনের নিরাপদ ব্যবহারের প্রথম ধাপে ব্যবহারকারীকে নিশ্চিত করতে হয় যে অনুমোদিত মানুষ ছাড়া আর কেউ যেন এটি ব্যবহার করতে না পারে। সাধারণত যে উপায়ে এটি করা হয় সেটি পাসওয়ার্ড, পাসকোড, পিনকোড, পিন নম্বর, পাস কি, এসব বিভিন্ন নামে পরিচিত।
সাধারণত পিনকোড চার অঙ্কের হয়। তবে কখনও কখনও আরো বেশি অঙ্কেরও হতে পারে। আমরা আগের শ্রেণিতে ক্রেডিট কার্ডের পিনকোড সম্পর্কে জেনেছি। মুঠোফোনের পিনকোডও একইভাবে কাজ করে।
এবার আমরা নিচের এই ছকটি পূরণ করব। (পাঠ্য বইয়ের ৩৪ পৃষ্ঠার কাজ)
পরিবারের কতজন সদস্য নিরাপত্তার জন্য পিনকোড চালু করেছেন?
উত্তর : ৫জন সদস্যের মধ্যে ৩ জন পিনকোড ব্যবহার করে।
পরিবারের সদস্যরা মুঠোফোনের নিরাপত্তার জন্য কী কী পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন?
উত্তর: মুঠোফোনের নিরাপত্তার জন্য আমাদের পরিবারের সদস্যরা কঠিন পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ন দিয়ে থাকেন। মুঠোফোন রাখা ও বহনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন। অপরিচিত ব্যক্তিরা যাতে মুঠোফোন ধরতে না পারে সে দিকে খেয়াল রাখেন। মুঠোফোনে একান্ত ব্যক্তিগত কোনো তথ্য বা ছবি রাখেন না। অ্যাপস বা সফটওয়্যার ইনস্টল করা সময় সতর্ক থাকেন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস ব্যবহার করেন না। কোনো অনলাইন একাউন্ট ব্যবহার করার পর লগআউট করে থাকেন।
ইতোপূর্বে চুরি হওয়া ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বহুল ব্যবহৃত ও বিরল ব্যবহৃত পিনকোডের একটি তালিকা করেছেন (তথ্যসূত্র: ডেটা জেনেটিক্স)। সেখানে দেখা গিয়েছে বহুল ব্যবহৃত পিনকোডগুলো হলো ০০০০, ১১১১, ২২২২ ইত্যাদি। পিনকোড যেন কেউ উদ্ধার করতে না পারে সেজন্য এর কিছু বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়। যেমন, পিনকোডটিতে যেন সবগুলো একই অঙ্ক না থাকে। আবার ১২৩৪ বা ৯৮৭৬ এই পিনকোডগুলোও সহজে অনুমান করে ফেলা যায়।
এখন আমরা নিচের ঘরে কয়েকটি সহজ ও কঠিন পিনকোড লিখে অনুশীলন করব।