সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতন্দ্র প্রহরীদল

একবিংশ শতাব্দীতে যে ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমটি সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সেটি হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়া। আমরা নিশ্চয়ই অনেকেই বিভিন্ন ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে পরিচিত, তাই না? পরিচিত না হয়ে থাকলে কোন সমস্যা নেই। কিছুক্ষণের মাঝেই আমরা পরিচিত হয়ে যাব।

চলো প্রথমেই আমাদের পরিচিত কয়েকটি ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম লিখি এবং সেই মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে আমরা কোন কাজগুলো করি তা লিখি। এই কাজটি করার ক্ষেত্রে আমরা চাইলে আমাদের পাশের বন্ধুর সহায়তা নিতে পারি। (পাঠ্য বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠার কাজ)

১। ফেসবুক – ফেসবুকে আমরা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করি, ছবি বা স্ট্যাটাস শেয়ার করি, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও কনটেন্ট দেখি এবং শেয়ার করি।

২। টুইটার –  টুইটারে আমরা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করি, ছবি বা টুইট শেয়ার করি, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও কনটেন্ট দেখি এবং শেয়ার করি।

৩। ইনস্টাগ্রাম – ইনস্টাগ্রামে আমরা সবার সাথে যোগাযোগ করি, ছবি শেয়ার করি, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও কনটেন্ট দেখি এবং শেয়ার করি।

৪ । টিকটক – টিকটকে আমরা বিনোদনমূলক কনটেন্ট দেখি এবং শেয়ার করি, বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করি ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা যেসব কাজ করি

আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে আমরা মূলত বিভিন্ন মানুষের সাথে যোগাযোগ করি। সেই সাথে আরো বেশ কিছু কাজ করি যেগুলোর পেছনে আমাদের কোন ধরনের অর্থ ব্যয় না হলেও আমাদের দিনের অনেকটুকু সময় ব্যয় হয়ে যায়। আমরা সাধারণত আমাদের মুঠোফোনগুলোর সাহায্যে বিভিন্ন ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করি। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় মুঠোফোনের ছোট স্ক্রিনের দিকে অনেক বেশি সময় একটানা তাকিয়ে থাকার ফলে আমাদের চোখে নানা সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত মনোযোগ ব্যয় করার ফলে আমাদের অন্যান্য কাজে মনোযোগ দিতেও অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।

এখন তাহলে প্রশ্ন হল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আমরা কীভাবে ব্যবহার করবো? আমরা আসলে কতটা সময় ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যয় করব? দিনের মাঝে এমন কোন সময় কি আছে যখন আমরা এসব ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করব না? এই মাধ্যমগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে আমাদের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে? এসো বিষয়গুলো নিয়ে জোড়ায় আলোচনা করি এবং এরপর আমরা সবাই মিলে একটি উপস্থিত বক্তৃতার আয়োজন করব। বক্তৃতার জন্য নিচের বিষয়বস্তুগুলো থেকে কোন একটিকে নির্বাচন করি

বক্তৃতার বিষয়

১। ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কত সময় ব্যয় করা উচিত।

২। দিনের কোন সময়টাতে আমরা ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করব।

৩। ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিব্যবহারের অসুবিধা।

তাহলে, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে জেনেছি। তবে এটি নিয়ে ভয় না পেয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। অন্যান্য প্রযুক্তির মতই এটি খুব দ্রুতগতিতে আমাদের সমাজ কাঠামোতে পরিবর্তন আনছে। যেহেতু এই পরিবর্তনের গতি সামাজিক রীতিনীতি ও দেশের আইনের স্বাভাবিক বিবর্তনের চেয়ে দ্রুত, আমরা এখনও শিখছি কীভাবে এর সাথে তাল মেলাতে হবে।

এই পর্যায়ে আমরা সবাই মিলে একটি উপস্থিত বক্তৃতার আয়োজন করব। বক্তৃতার জন্য নিচের বিষয়গুলো নেওয়া যেতে পারে বা এর বাইরেও আমাদের পছন্দের বিষয় থাকতে পারে।

বক্তৃতার বিষয়

১। ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কতটুকু সময় ব্যবহার করা উচিত;

২। দিনের কোন সময় ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত নয়; 

৩। ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ 

অপু স্কুল থেকে বাসায় এসেই মায়ের মোবাইলটা হাতে নেয়। কিন্তু মা তাকে বারবার বলতে থাকেন কিছু খেয়ে বিশ্রাম নাও। কিন্তু কে কার কথা শোনে! সে তারপরও মায়ের মোবাইল নিয়ে শুয়ে শুয়ে কার্টুন, সিনেমা, মায়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গিয়ে কমেন্ট দেখা ইত্যাদি করতে করতে বিশ্রামের সময় পার করে। মা তাকে অনেক বুঝানোর পরও সে কথা তো শুনেই না বরং মায়ের সাথে মেজাজ করে। তাছাড়া স্কুলেও সে ক্লাসে পড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না। সবাই যখন বিভিন্ন ধরনের গল্পে মেতে থাকে, তখন সে মায়ের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যদের দেওয়া মন্তব্যগুলো নিয়ে ভাবতে থাকে। ক্লাসের বন্ধুরা মজা করে কিছু বললেও সে রেগে যায়। কয়েকদিন ধরে তার এই পরিবর্তনটা শিক্ষকরাও খেয়াল করছেন।

উপরের ঘটনায় অপুর আচরণে কী কী সমস্যা পরিলক্ষিত হয়েছে? এই ধরনের আচরণ পরিবর্তনের কারণ কী হতে পারে?

সময়ের পাশাপাশি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও সচেতন হতে হবে। অনেকের কাছে প্রথম প্রথম এসব নিয়ে কথা বলা অস্বস্তিকর মনে হবে। কিন্তু ক্লাসে আমরা সবাই সবার বন্ধু। আমরা একে অপরের মানসিক সুস্থতা রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। আমরা পাশের বন্ধুর সাথে নিচের প্রশ্নগুলো নিয়ে আলাপ করব।

১। আমাদের বয়সী শিক্ষার্থীদের কী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের একটি একাউন্ট থাকা উচিত?

২। মা বাবার মোবাইল নিয়ে আমি দিনে কতটুকু সময় ব্যয় করতে পারি?

৩। মা বাবার মোবাইল নিয়ে আমি কী কী করতে পারি?

৪। আমাদের বয়সী কেউ যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করে তাহলে তার জন্য আমাদের পরামর্শ কী কী হতে পারে?

উপরের প্রশ্নগুলো বিবেচনা করে আমাদের জন্য কিছু নীতিমালা নিচের খালি ঘরে পয়েন্ট করে বাড়ি থেকে লিখে নিয়ে আসব। (পাঠ্য বইয়ের ৪২ পৃষ্ঠার কাজ)

আমাদের জন্য কিছু নীতিমালা

১। আমাদের বয়সী শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের একাউন্ট থাকা উচিত নয়। কেননা স্কুল টাইমের পর আমাদের হাতে তেমন একটা সময় থাকে না যেসময় অযথা সোশ্যাল মিডিয়াতে দিতে পারি। সোশ্যাল মিডিয়াতে একাউন্ট থাকলে স্কুল টাইমের পর আমরা খেলাধুলা না খেলে অনলাইনে অযথা সময় দিতে ইচ্ছে হবে অথবা পড়ার সময়টুকু আমরা নাও পেতে পারি। তাই আমাদের একাউন্ট থাকা উচিত নয়।

২। মা বাবার মোবাইল নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ দিনে ১ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে পারি। এর চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করলে আমাদের পাঠে মনোযোগ দিতে ইচ্ছে করবে না। কেননা মোবাইলে আমরা যে ভিডিও দেখি বা গেম খেলি তা আমাদের মানসিক চিন্তায় প্রভাব ফেলে। মোবাইলে বেশি সময় ব্যয় করলে আর আমাদের পড়তে ইচ্ছে করবে না।

৩। মা বাবার মোবাইল নিয়ে আমরা শিক্ষণীয় বিভিন্ন বিষয় দেখতে পারি, যেসকল পাঠ কঠিন মনে হবে তা আমরা ইউটিউবের মতো ভিডিও শেয়ারিং সাইটের টিউটোরিয়াল দেখে বুঝে নিতে পারি। পাঠ সংক্রান্ত তথ্য সহপাঠি ও শিক্ষকদের কাছ থেকে জেনে  নিতে পারি।

৪। আমাদের বয়সী কেউ যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করে তাহলে তার জন্য আমাদের পরামর্শ হচ্ছে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া, স্কুল ছটির পর বাসায় এসে বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলতে যাওয়া, মাঠে খেলার সুযোগ না হলে ঘরে ইনডোর গেমের বিভিন্ন উপকরণ যেমন-ক্যারম, দাবা, লুডো ইত্যাদি সংগ্রহ করা এবং খেলায় পরিবারের সদস্যদের সাথে অংশগ্রহণ করা। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় বেশি ব্যয় করা ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তিও বৃদ্ধি পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *