আমরা ডিজিটাল জীবনযাপন নিয়ে অনেক কিছু জেনেছি ও চর্চা করেছি। আজকের সেশনে আমরা সবাই মিলে একটি নাটিকা তৈরি করবো।
এই নাটিকার পেছনে থাকবে একটি গল্প। সেই গল্পে প্রধান চরিত্র থাকবে আমাদেরই একজন বন্ধু। গল্পটি হবে এমন –
আমাদের বন্ধু সম্প্রতি ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছে। বেশিরভাগ সময় সে তার বন্ধুবান্ধবদের সাথে গল্পগুজব করে কাটালেও, একদিন একজন অপরিচিত মানুষ তার সাথে ডিজিটাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলা শুরু করে। সেই মানুষটি জানায় যে সে স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা। প্রথমেই সে আমাদের সেই বন্ধুকে পড়ালেখা নিয়ে কিছু সাহায্য করে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।
এরপর একদিন সে বন্ধুকে জানায় একটি বিশেষ সরকারি বৃত্তি চালু হয়েছে। সে যদি বৃত্তির জন্য বিবেচিত হতে চায় তাহলে তাকে নাগরিক পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনের সনদ জমা দিতে হবে। এরপর একদিন হঠাৎ জানা গেল তার বাবার নামে থানায় মামলা হয়েছে। মামলার কাগজে লেখা আছে তার বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কেউ একজন স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টাকাটা আত্মসাৎ করেছে। এই পর্যায়ে এসে কাহিনির মোড় ঘুরে যাবে।
আমরা বাকি বন্ধুরা মিলে একটি গোয়েন্দাদল তৈরি করব। তারপর আমরা আমাদের বন্ধুর ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট ধরে ধরে বের করব কীভাবে তথ্যগুলো চুরি হয়েছে এবং সেই তথ্যগুলো ব্যবহার করে জাল পরিচয়পত্রটি তৈরি করা হয়েছে। সবশেষে, আমরা অনলাইনে পাল্টা জিডি করে তার বাবার নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করব।
আমরা ক্লাশের সবাই আলাদা আলাদা নাটিকা লিখব না। তিনটি দল হবে। প্রতিটি দল উপরের গল্পটি অনুসারে একটি করে নাটিকার স্ক্রিপ্ট লিখবে। প্রতি দলের আবার কাজ ভাগ করা থাকবে কারা নাটক পরিচালনা করবে, কারা লিখবে, কারা অভিনয় করবে ইত্যাদি।
প্রথমে আমরা নিচের ছকে আমাদের দলের নাম ও সদস্যদের নাম লিখে ফেলি। (পাঠ্য বইয়ের ৪৯-৫০ পৃষ্ঠার কাজ)
দলের নাম: গোলাপ ।
সদস্যদের নাম: দিয়ান, মীনার, ইফতি, জহির, ইসরাত, তানিয়া।
এরপর আমরা ঠিক করব আমাদের নাটিকার কী কী চরিত্র থাকবে। সেটি নিচের ঘরে লিখে
ফেলি ।
নাটিকা তৈরি-
নাটিকায় চরিত্রে যারা থাকবে:
- প্রধান চরিত্র: রাকিব।
- প্রতারক ব্যক্তি: আমিরুল ইসলাম।
- রাকিবের বাবা: জাকির হোসেন।
- রাকিবের বন্ধুরা: জামশেদ, রিতা, সিয়াম।
দৃশ্য—১
রাকিব একদিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজ করছিল। হঠাৎ সে একজন অচেনা ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেখতে পায়। লোকটির প্রোফাইলে তার পরিচয়ের জায়গায় লেখা, তিনি একজন শিক্ষা কর্মকর্তা। তাই রাকিব কিছু না ভেবেই ঐ ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপট করে। মাঝে মাঝেই রাকিব এবং সেই ব্যক্তির মধ্যে পড়াশোনা নিয়ে বিভিন্ন কথা চলতে থাকে। এমনই একদিন…
আমিরুল ইসলাম (অচেনা সেই ব্যক্তিটি): রাকিব, তুমি কি জানো, সরকার থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে? চাইলে তুমিও এই বৃত্তি পেতে পার ।
রাকিব: সত্যিই! শুনে খুব ভালো লাগল। হ্যাঁ, আমিও বৃত্তি পেতে চাই। আমার কী করতে হবে?
আমিরুল ইসলাম: খুব বেশি কিছু না, কিছু কাগজপত্র লাগবে। তুমি তোমার জন্মনিবন্ধন এবং তোমার বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ছবি তুলে আমাকে দাও। আমি তোমার হয়ে একটি আবেদন করে দেব।
রাকিব: সত্যিই আপনি অনেক ভালো। আমি আপনাকে এখনই ছবিগুলো তুলে দিচ্ছি আমাকে এভাবে উপকার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
রাকিব তার জন্মনিবন্ধন এবং বাবার জাতীয় পরিচয়ত্রের ছবি তুলে কিছুক্ষণ পরেই সেই ব্যক্তিকে পাঠিয়ে দিল। এরপর নিজেদের মধ্যে অল্প কিছু আলাপচারিতা করে সেদিনের মত কথা শেষ করল।
দৃশ্য— ২
এরপর অনেকদিন ধরে রাকিবের সাথে সেই ব্যক্তির আর কোনো কথা হয়নি। রাকিব এর মধ্যে বেশ কয়েকবার তাকে মেসেজ পাঠালেও কোনো উত্তর আসেনি। এভাবে দিন যায় । হঠাৎ একদিন রাকিবদের বাসায় একটি চিঠি আসে । চিঠিটি রাকিবের বাবা জাকির হোসেন গ্রহণ করেন এবং চিঠিটি পড়ে তিনি বেশ ঘাবড়ে যান। কারণ, চিঠিটিতে রাকিবের বাবার নামে একটি মামলার কাগজপত্র যুক্ত ছিল। রাকিবের বাবা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে টাকা আত্নসাৎ করেছেন, এই মর্মে মামলাটি করা হয়েছে ।
জাকির হোসেন: আমি তো কখনও কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নেইনি। তাহলে টাকা আত্মসাতের তো প্রশ্নই আসে না। তাহলে আমার নামে মামলা কীভাবে হল?
রাকিবের মা: আমার মনে হচ্ছে, কোথাও কোন ভুল হচ্ছে। কিন্তু এখানে তো তোমার নাম- ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর একেবারে সঠিকভাবে লেখা। এগুলো কীভাবে সম্ভব হল? তারা কীভাবে এসব তথ্য জানে?
জাকির হোসেন: আমার মনে হচ্ছে, তারা কোনোভাবে আমার পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ করেছে। কিন্তু আমি তো কাউকেই আমার পরিচয়পত্র দেইনি। তাহলে কীভাবে তারা এই তথ্য পেল?
রাকিব: বাবা, আমার মনে হয়, এই ভুলটি আমার দ্বারাই হয়েছে। ফেসবুকে একজন ব্যক্তি একদিন বৃত্তি দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে আমার জন্মনিবন্ধন এবং তোমার জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি নিয়েছিল। আমার মনে হচ্ছে, সেই ব্যক্তি কোনো প্রতারক ছিল। আর তিনিই এমন খারাপ একটি কাজ করেছেন।
জাকির হোসেন: রাকিব, তুমি কাজটি একদমই ঠিক করোনি। দেখলে তো, তোমার এমন একটি কাজের জন্য আমি কত বড় বিপদে পড়লাম?
রাকিব: হ্যাঁ, বাবা। আমি আসলে না জেনে, না বুঝে এটা করেছি। আমার এটা করা একদমই উচিত হয়নি।
দৃশ্য—৩
রাকিব: হ্যাঁ, বাবা । আমি আসলে না জেনে, না বুঝে এটা করেছি। আমার এটা করা একদমই উচিত হয়নি।
রাকিব তার ভুল বুঝতে পারল। কিন্তু কীভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, পারিবারিকভাবে তারা এটি নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন পরামর্শ দিতে লাগল ।
রাকিব পরের দিন স্কুলে গেল। তাকে মনমরা দেখে বন্ধুরা কারণ জানতে চাইল, রাজুও তাদেরকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বিস্তারিত বলতে লাগল । কথাগুলো শুনে তার বন্ধুরা তাকে আশ্বস্ত করল, এটার সমাধান তারা সবাই মিলে করতে পারে।
জামশেদ: তুমি একদমই চিন্তা করো না, রাতুল। আমরা সবাই মিলে একটা সমাধানের চেষ্টা করতে পারি ।
রাকিব: কিন্তু কীভাবে? আমি তো কোনো উপায় দেখছি না।
জামশেদ: সমাধান একটা আছে। তুমি যে সেই ব্যক্তির সাথে মেসেজিং করেছিলে, তার প্রমাণ নিশ্চয়ই তোমার কাছে আছে? আমরা সেই মেসেজগুলোর স্ক্রিনশট সংগ্রহ করব। তারপর থানায় এসব প্রমাণসহ একটি সাধারণ ডায়েরী করব।
রিতা: তুমি ঠিক বলেছ, জামশেদ। আমারও মনে হচ্ছে, এসব প্রমাণ উপস্থাপন করে আমরা খুব সহজেই এই মামলা থেকে তোমার বাবার নাম প্রত্যাহার করাতে পারি ।
সিয়াম: হ্যাঁ, তাই আমাদের আর দেরী করা উচিত হবে না । জামশেদ, চলো তোমাদের বাসায় যাই। এরপর ফোন থেকে সেই সব স্ক্রিনশটের ছবিগুলোকে প্রিন্ট করে সাধারণ ডায়েরির সাথে যুক্ত করে দেব।
জামশেদ: তোমাদের অনেক ধন্যবাদ। চলো, যাই।
এরপর রাকিব এবং তার বন্ধুরা বাসায় গিয়ে সকল তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করল। প্রতারক ব্যক্তির ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি নিল। পরের দিন রাকিব এবং তার বাবা জাকির হোসেন নিকটস্থ থানায় গেল এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সবকিছু খুলে বলল । তারা উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করল। এর কিছুদিন পর তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেল, প্রকৃত টাকা আত্মসাতকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আর রাকিবের বাবার নাম এই মামলা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে ।