৯ম শ্রেণি-ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা-১ সেশন-৩

আজকের সেশনে প্রথমে আমরা আলোচনা করব নিরপেক্ষতা বিষয়টি।

নিরপেক্ষতা কী?

নিরপেক্ষতা বলতে কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে কোনো পক্ষপাত দৃষ্টিভঙ্গি না রেখে, আবেগের উপর নির্ভর না করে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিচার করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়াকে বোঝায়।

৯ম শ্রেণি-ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা-১ সেশন-৩ (যুক্তি-তর্কে নিরপেক্ষতা যাচাই)

৯ম শ্রেণি-ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা-১ সেশন-৩ (যুক্তি-তর্কে নিরপেক্ষতা যাচাই) এখানে মনে রাখা জরুরি, পক্ষপাতিত্ব সবসময় মন্দ নয়। আমার নিজের কাছে যখন মনে হবে আমি পক্ষপাতিত্ব করছি তখন আমার উচিৎ হবে আমার মতের বিরুদ্ধ যুক্তিটির পক্ষে যথেষ্ট প্রমান আছে কিনা তা ভেবে দেখা। প্রমান যদি থাকে তাহলে আমাদের ঐ প্রমানের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

কোন একজন ব্যক্তি যখন পেশা হিসেবে সাংবাদিক বা তথ্যপ্রদানকারি তখন তাকে নিরপেক্ষভাবে তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। সেখানে তিনি তার আবেগ কিংবা পূর্ব অভিজ্ঞতাকে ভুলে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যই আমাদের দিয়ে থাকেন। তবে, অনেক ক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমের উপর এর মালিকানার প্রভাবের কারনে সংবাদ অনেক সময় পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়।

৯ম শ্রেণি-ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা-১ সেশন-৩ (যুক্তি-তর্কে নিরপেক্ষতা যাচাই)

কী কী কারণে একটি তথ্য বা সংবাদ প্রভাবিত হতে পারে? (পাঠ্য বইয়ের পৃষ্ঠা: ১০-১১ এর সমাধান)

বিভিন্ন কারণে একটি তথ্য বা সংবাদ প্রভাবিত হতে পারে। যেমন-

১। রাজনৈতিক কারণে তথ্য বা সংবাদ প্রভাবিত হতে পারে।
২। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মনোরঞ্জনের জন্য তথ্য বা সংবাদ প্রভাবিত হতে পারে।
৩। আবেগের কারণে তথ্য বা সংবাদ প্রভাবিত হতে পারে।
৪। অর্থের প্রভাবে তথ্য বা সংবাদ প্রভাবিত হতে পারে।
৫। ক্ষমতার অপব্যবহারর কারণে তথ্য বা সংবাদ প্রভাবিত হতে পারে।

আগামী সেশনের প্রস্তুতি:

এখন আমাদের যুক্তি-তর্কের খেলা শুরু হবে। শিক্ষক আমাদের শ্রেণিকক্ষকে দুইটি দলে ভাগ করে ‘পক্ষ দল’ ও ‘বিপক্ষ দল’ নির্বাচন করে দিবেন।

খেলার নিয়ম হচ্ছে, পক্ষ দলের একজন বিষয়ের পক্ষে ১ মিনিট করে বলবে, এরপর বিপক্ষ দলের একজন ১ মিনিট বলবে। এভাবে খেলাটি ১৫ মিনিট চলবে। একজন শিক্ষার্থী একবারের বেশি বলার সুযোগ পাবে না। তবে কারো মনে কোনো যুক্তি এলে সে তার দলের অন্য একজনকে চিরকুটে লিখে দিয়ে সাহায্য করতে পারবে।

বিষয় :

১। ‘একমাত্র গণমাধ্যমই পারে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে’ বা

২। ‘সত্য যাচাই করা এবং প্রচার করার দায়িত্ব একমাত্র সাংবাদিকের’

বিতর্ক: ‘একমাত্র গণমাধ্যমই পারে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে।’

৯ম শ্রেণি-ডিজিটাল প্রযুক্তি শিখন অভিজ্ঞতা-১ সেশন-৩ (যুক্তি-তর্কে নিরপেক্ষতা যাচাই)

পক্ষ দল- ১ম বক্তা :

আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃক আয়োজিত আজকের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, মাননীয় মডারেটর, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী,  আমার পক্ষ ও বিপক্ষ দলের সকল বন্ধুদের জানায় সালাম । আজকের বিতর্কের বিষয় হচ্ছে “একমাত্র গণমাধ্যমই পারে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে।” অত্যন্ত যুক্তি যক্ত ও সঙ্গত কারণে উক্ত বিষয়ের পক্ষে আমি ও  আমার দলের অবস্থান।

আজ, আমরা এই দাবীটি উত্থাপন করতে চাই যে “শুধুমাত্র মিডিয়াই প্রকৃত বাস্তব সত্য উন্মোচন করতে পারে।” আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, মিডিয়া তথ্য প্রচারে, ঘটনা যাচাই-বাছাই করতে এবং ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মিডিয়ার প্রতিটি ব্যক্তি নিজেদের জীবন বাজি রেখে অতন্ত প্রহরী হিসাবে সত্য উৎঘাটনের জন্য কাজ করে, লুকানো সত্য উন্মোচন করে এবং অন্যায়কে প্রকাশ করে।

নিঃসন্দেহে, একটি সুস্থ ও শান্তিময় সমাজ ব্যবস্থার  জন্য একটি দায়িত্বশীল ও মুক্ত সংবাদব্যবস্থা থাকা অপরিহার্য। সাংবাদিকরা প্রায়ই আমাদের কাছে তথ্য তুলে ধরার জন্য তাদের জীবনের ঝুঁকি নেয় এবং আমাদের অবশ্যই তাদের অবদানকে স্বীকার করতে হবে এবং প্রশংসা করতে হবে।

বিপক্ষ দল- ১ম বক্তা:

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপস্থিত সম্মানিত সভাপতি, মডারেটর, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী,  পক্ষ ও বিপক্ষ দলের সকল বন্ধুদের সালাম জানিয়ে আজকের বিতর্কের বিষয়বস্তুর বিপক্ষে আমি ও  আমার দলের যুক্তি উপস্থাপন করছি।

যদিও আমরা একটি মুক্ত সংবাদব্যবস্থার গুরুত্ব স্বীকার করি, এটি বলাই কঠিন হবে যে মিডিয়াই সত্যের একমাত্র রক্ষক। আজকের ডিজিটাল যুগে, তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়, এবং উৎসের সঠিকতা বিবেচনা করা অপরিহার্য। সংবাদ মিডিয়াও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মতো, পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত নয়, এবং চাঞ্চল্যকরতা তথ্যের বস্তুনিষ্ঠ উপস্থাপনাকে গুলাটে করতে পারে। নাগরিকদের শুধুমাত্র একটি উৎসের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয় বরং বিভিন্ন আউটলেট থেকে ক্রস-রেফারেন্সিং তথ্যের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা করে প্রকৃত সত্য নিজেদেরকে উন্মোচন করতে হবে। তাহলে আমরা প্রকৃত সত্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারব। শুধুমাত্র গণমাধ্যমের উপর সঠিক তথ্যের জন্য নির্ভর করা উচিত হবে না।

পক্ষ দল- ২য় বক্তা:

আমরা একমত যে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং নাগরিকদের তথ্যের সংগ্রহে বিচক্ষণ হওয়া উচিত। যাইহোক, এটা অনস্বীকার্য যে মিডিয়া প্রায়শই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি উন্মোচন এবং জনগণের নজরে আনার প্রাথমিক উৎস হিসাবে কাজ করে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, ডকুমেন্টারি, এবং গভীরভাবে রিপোর্টিং হল এমন হাতিয়ার যা জনসাধারণকে সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেয়। গণমাধ্যম ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিবর্গ এবং নাগরিকদের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে।

বিপক্ষ দল- ২য় বক্তা:  

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রশংসনীয় হলেও, মিডিয়া শিল্পের সীমাবদ্ধতা এবং সম্ভাব্য পক্ষপাতগুলি স্বীকার করা অপরিহার্য। সোশ্যাল মিডিয়া, সিটিজেন জার্নালিজম এবং অন্যান্য বিকল্প উৎসগুলিও সঠিক তথ্য প্রচারে অবদান রাখে। একটি একক সত্তার উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা একটি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নিয়ে যেতে পারে। নাগরিকদের দায়িত্ব হলো সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সন্ধান করা, জটিল সমস্যাগুলির আরও ব্যাপক ভাবে অনুসন্ধান করে মত প্রকাশ করা বা সিদ্ধান্ত নেওয়া।

উপসংহার:

পক্ষদল যুক্তি দেয় যে মিডিয়া তার অনুসন্ধানী ভূমিকা এবং সংস্থানগুলির কারণে প্রকৃত সত্য উৎঘাটিত হয়, বিরোধীরা দাবি করে যে শুধুমাত্র মিডিয়ার উপর নির্ভরতা ঠিক নয়, নিজেরাই প্রকৃত সত্য উৎঘাটনের জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *