বিতর্ক প্রতিযোগিতা

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকের বিতর্কের বিয়য় হচ্ছে-“শিক্ষার্থীদের মাদক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয় নয়, পরিবারের ভূমিকাই প্রধান ।” এখানে পক্ষ ও বিপক্ষ দলের ৩জন করে বিতার্কিকের বক্তব্য উপস্থাপন করা হলো। উক্ত স্ক্রিপ্টের সাথে নিজের তথ্য সম্পৃক্ত করে একটি পরিপূর্ণ যৌক্তিক তথ্যবহুল বিতর্ক কর্মশালা বা প্রতিযোগিতার আয়োজনের সহায়ক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

পক্ষ দলের- প্রথম বিতার্কিক 

সময়: ৫ মিনিট

“নেশা নয়, স্বাস্থ্যই হোক জীবনের নতুন প্রত্যাশা”-এ প্রত্যয় নিয়ে শুরু করছি আজকের বিতর্ক প্রতিযোগিতা।

চট্রগ্রাম শহরের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃক আয়োজিত আজকের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপস্থিত আছেন- মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, সম্মানীত শিক্ষক, উপস্থিত দর্শক এবং পক্ষ ও বিপক্ষ দলের বিতার্কিক বন্ধুদের জানায় আমার সালাম-আসসালামু আলাইকুম। আজকের বিতর্কের বিষয় হচ্ছে “শিক্ষার্থীদের মাদক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয় নয়, পরিবারের ভূমিকাই প্রধান।”  উক্ত প্রস্তাবনার পক্ষে  আমি ও আমার দলের অবস্থান।

মাননীয় সভাপতি, যেসব প্রাকৃতিক বা রাসায়নিক দ্রব্য গ্রহণ করলে একজন মানুষের মনের অনুভূতি ও চিন্তা-চেতনার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অস্বাভাবিক অবস্থায় চলে যায় সেসকল দ্রব্যকে মাদক বলে। যেমন-হেরোইন, তামাকজাত পণ্য, মরফিন, কোডেইন, গাঁজা, ক্যান্নাবিস, ইয়াবা ইত্যাদি। এসমস্ত মরণঘাতী দ্রব্যের প্রতি মানুষ আসক্ত হয়ে পড়লে তাকে আমরা বলি মাদকাসক্তি। বিশেষ করে কিশোর বয়সের শিক্ষার্থীরা  মাদকাসক্ত সঙ্গীদের সাথে মেলামেশার মধ্য দিয়েই প্রধানত মাদকাসক্তির সূত্রপাত ঘটিয়ে থাকে।

মাদকের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে না জেনেই, কেবল সাময়িক উত্তেজনা লাভের জন্য ও বন্ধুদের প্ররোচনায় কিশোর-কিশোরীরা মাদকদ্রব্য সেবন করে। পরে তা তাদের মরণনেশায় পরিণত হয়। 

আমাদের সমাজজীবনে মাদকাসক্তি বর্তমানে একটি ভয়াবহ সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। এটি আমাদের সামাজিক ও নৈতিক জীবনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। 

শারীরিক ক্ষতির মধ্যে একজন মাদক গ্রহণকারীর হৃদরোগ, যক্ষ্মা, ক্যান্সার ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তার মানসিক স্বাস্থ্যও এর ফলে দূর্বল হয়ে পড়ে। মাদক গ্রহণকারীরা হতাশা ও হীনমন্যতায় ভোগে। নিজেদের ক্ষতি তো এরা করেই, উপরন্তু ভয়, উৎকণ্ঠা ও উত্তেজনার শিকার হয়ে সমাজেও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ।

পারিবারিক জীবনে মাদকের প্রভাব নানা জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে। পুরো পরিবারের সুখ-শান্তিকে নষ্ট করে।

মাননীয় সভাপতি, আমি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলতে চাই এই মরনঘাতী মাদক  নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয় নয়, পরিবারের ভূমিকাই প্রধান।

প্রথমত, মানসিক স্বাস্থ্য ও আচরণের গবেষণা জানায়, শিক্ষার্থীরা তাদের পারিবারিক পরিবেশে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ অর্জন করে থাকে। এই মূল্যবোধগুলি তাদের জীবনের সকল সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে। কোনটি শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রহণীয় আর কোনটি বর্জনযোগ্য।  বিশেষ করে মাদক গ্রহণের মতো বিপজ্জনক অভ্যাস থেকে বিরত রাখার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাই বেশি থাকে।

দ্বিতীয়ত, একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, যেসব শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে, তাদের মাদক দ্রব্য গ্রহণের প্রবণতা অনেক কম। সমীক্ষায় দেখা যায় যে, পরিবারের সদস্যদের সাথে যেসকল শিক্ষার্থীরা সময় বেশি কাটিয়ে থাকে, নিজেরদের সমস্যা নিয়ে কথা বলে ও পরিবারের সদস্যদের প্রতি আস্থা বেশি রাখে সেসকল শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং নেশা দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ কম থাকে।

তৃতীয়ত, পরিবারের কর্তা যখন তাদের শিক্ষার্থী তথা তাদের সন্তানদের প্রায় দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে, সন্তানদের মনিটরিং করে, এ  মনিটরিং একটি শিশুর মাদক দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণকে হ্রাস করতে পারে। যখন পরিবার তার সন্তানদের কার্যকলাপের উপর নজর রাখে এবং তাদের সাথে নিয়মিত কথা বলে, তখন তারা তাদের সন্তানকে মাদক দ্রব্যের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করতে পারে এবং তাদের সঠিক পথ-নির্দেশ করতে পারে।

চতুর্থত, পারিবারিক বন্ধন ও সমর্থন একজন শিক্ষার্থীকে মানসিক চাপ ও হতাশা থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে, যা মাদক দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ হ্রাস করতে পারে। পারিবারিক বন্ধন একজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সামাজিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে এবং তাদের মাদক দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ থেকে দূরে রাখে।

সম্মানিত বিচারক ও শ্রোতাগণ, এই যুক্তিগুলি থেকে স্পষ্ট যে, মাদক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীদের প্রধান অভিভাবক হিসেবে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। একটি সুস্থ ও নীতিবান জীবন গঠনে পরিবারের ভূমিকা অনন্য। সুতরাং পরিশেষে আমি বলব, “শিক্ষার্থীদের মাদক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয় নয়, পরিবারের ভূমিকাই প্রধান।” ধন্যবাদ মাননীয় সভাপতি ও ধন্যবাদ বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলী।

বিপক্ষ দলের- প্রথম বিতার্কিক 

সময়: ৫ মিনিট

“মানুষকে সভ্য করে তোলার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বিদ্যালয়।” – বলেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ- লিও  টলস্টয়। 

মাননীয় সভাপতি ও বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলীকে ধন্যবাদ জানায় আমাকে এ মহান মঞ্চে বক্তব্য প্রদানের সুযোগ দেয়ার জন্য। আজকের বিতর্কের বিষয় নির্ধারিত হয়েছে-  “শিক্ষার্থীদের মাদক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয় নয়, পরিবারের ভূমিকাই প্রধান।” বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে আমি এবং আমার দল এই বিষয়টির বিপক্ষে অবস্থান করছি । 

মাননীয় সভাপতি, পক্ষ দল আজকের বিতর্কে যে বিষয়টি টেনে এনেছেন সেটি হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পরিবারের প্রতি বেশি সময় দেওয়া ও পারিবারিক দিক নির্দেশনা। মাননীয় সভাপতি এই আধুনিক বিশ্বে কয়জন শিক্ষার্থী পরিবারকে যথার্থ সময় দিচ্ছে? যেখানে শিক্ষার্থীদের ও পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় মুঠোফোনের ছোট্ট পর্দার স্ক্রলিংয়ে, ফেসবুক, টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চ্যাটিংয়ে। সেখানে অধিক সময় ব্যয় করা ও সঠিক দিক-নির্দেশনার বাণী খোঁজা- “ওলো বনে মুক্তা খোঁজার মতো।”

মাননীয় সভাপতি, আমি মনে করি মাদক নিয়ন্ত্রণে পরিবার নয়, বিদ্যালয়ের ভূমিকাই অপরিহার্য এবং অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের চেয়েও প্রধান।

মাননীয় সভাপতি বিদ্যালয় হল শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণের মূল ক্ষেত্র। এখানে তারা বিজ্ঞ শিক্ষকদের তত্তাবধানে নানা ধরণের সামাজিক মূল্যবোধ, রীতি-নীতি, ও আদর্শ শিখে থাকে, যা তাদের ব্যক্তি জীবনে, সামাজিক জীবনে, বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গাইড করে। মাদক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ের এই শিক্ষামূলক কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

মাননীয় সভাপতি, শিক্ষার্থীদের সঠিক গাইড করার জন্য পরিবারের ভূমিকাই যদি প্রধান হতো তাহলে সরকার ও বেসরকারি কর্তৃপক্ষ লক্ষ-কোটি টাকা খরচ এ মহান বিদ্যাপিঠ তৈরি করে পড়াশোনার পাাশিপাশি নীতি-নৈতিকতা শিক্ষার বিশাল কর্মশালা বা পরিবেশ তৈরি করতেন না। বরং পড়াশোনা বাদ দিয়ে মায়ের আচঁল ধরে ঘরে বসে থাকতে বলতেন পথ-নির্দেশক ভুলি শোনার জন্য। তাই এই মহান বিদ্যাপিঠ তৈরির মহৎ লক্ষ্যই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা, যা শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে নিজেদের দূরে রাখবে।

বিদ্যালয়ের পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঠিক আচরণ ও জীবনযাপনের দিকনির্দেশনা প্রদান করে। বিদ্যালয়ের মাধ্যমে চালু করা নানা প্রকল্প ও কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের মাদক দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করে।

বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি নিয়মিত ও আনুষ্ঠানিক কাঠামো প্রদান করে, যা তাদের জীবনে অনুশাসন ও দায়িত্ববোধ তৈরি করে। এই কাঠামো মাদক দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ কমাতে সাহায্য করে, কারণ শিক্ষার্থীরা তাদের সময় ও শক্তি পড়াশোনা এবং বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে ব্যয় করে।

বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা উন্নয়নে সাহায্য করে, যা মাদক দ্রব্য গ্রহণের প্রবণতা হ্রাস করে। সহপাঠীদের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করে এবং একে অপরের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, যা মাদক দ্রব্য গ্রহণের প্রবণতা কমায়।

বিদ্যালয়ে প্রচারিত মাদক নিরাময় ও প্রতিরোধ সম্পর্কিত শিক্ষামূলক প্রোগ্রামগুলো শিক্ষার্থীদের মাদক দ্রব্য গ্রহণের ক্ষতিকর দিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করে। এই প্রোগ্রামগুলো শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং তাদেরকে মাদক দ্রব্যের প্রতি ‘না’ বলার ক্ষমতা দেয়।

সম্মানিত বিচারক ও শ্রোতাগণ, এসব যুক্তি থেকে স্পষ্ট যে, শিক্ষার্থীদের মাদক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর প্রভাব পরিবারের চেয়েও বেশি হতে পারে। পরিশেষে আমার প্রতিপক্ষ দলের বন্ধুদের আমি আহবান করে বলব- আসুন আমরা একই সুরে বলি- শিক্ষার্থীদের মাদক নিয়ন্ত্রণে পরিবার নয়, বিদ্যালয়ের ভূমিকাই প্রধান। ধন্যবাদ মাননীয় সভাপতি ও ধন্যবাদ বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলী।

পক্ষ দলের- দ্বিতীয় বিতার্কিক

সময়: ৫ মিনিট

ধন্যবাদ মাননীয় সভাপতি ও বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী আমাকে এই মহান মঞ্চে বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য।  

পরিবার হল একজন ব্যক্তির শক্তি, যা তাকে সমস্ত সমস্যা মোকাবিলা করার সাহস দেয়। মাননীয় সভাপতি আমার দলের প্রথম বক্তা যখন পবিবারের দিক-নির্দেশনাকে  গুরুত্বারোপ  করে তখন আমার বিপক্ষ দলের প্রথম বক্তা কোনো সঠিক যুক্তি উপস্থাপন না করে গলাবাজিতে একচেটিয়া তা উপেক্ষা করে গেছেন। জ্ঞানীরা বলেন- ব্যবহারে বংশের পরিচয়। আর সে বংশ তৈরির মূল সিঁড়ি হচ্ছে পরিবার। নৈতিকতার মূল কেন্দ্রস্থল হচ্ছে পরিবার।  ভদ্র পরিবারের সন্তানেরা মাকদ গ্রহণ তো দূরের কথা কখনো ছোঁয়েও দেখবে না। 

শিক্ষার্থীর জীবনের প্রথম নৈতিক শিক্ষা অর্জিত হয় পরিবার থেকেই। আমরা প্রমাণ করতে চাই যে, মাদক নিয়ন্ত্রণে এ পরিবারের ভূমিকাই অপরিহার্য এবং প্রধান।

পরিবার হলো শিক্ষার্থীর প্রথম স্কুল। এখানেই শিক্ষার্থী জীবনের প্রাথমিক শিক্ষা, মূল্যবোধ, এবং নৈতিকতা অর্জন করে। এই শিক্ষা এবং মূল্যবোধ তাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনের সকল সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে।

পরিবার থেকে পাওয়া মানসিক সমর্থন শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি মূল উৎস। শিক্ষার্থীরা যখন বিপদে পড়ে বা চাপে থাকে, পরিবার থেকে পাওয়া এই সমর্থন ও সৎ পরামর্শ  তাদেরকে বিপদগামী পথ থেকে দূরে রাখে।

পরিবারের মনিটরিং এবং নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের মাদক দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত রাখে। পরিবার সদস্যরা যখন শিক্ষার্থীদের কার্যকলাপের উপর নজর রাখে এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে তারা কখনো কু-অভ্যাস তৈরি করবে না। মাদকজাত দ্রব্য থেকে শিক্ষার্থীরা সবসময় দূরে থাকার চেষ্টা করবে।

পারিবারিক বন্ধন ও অন্তরঙ্গতা শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি শক্ত মানসিক ভিত তৈরি করে। এই ভিতটি হল যে কোন বিপদ বা প্রলোভন থেকে নিরাপদ থাকার জন্য অপরিহার্য। যখন শিক্ষার্থীরা নিজেদের পারিবারিক প্রেক্ষাপটে নিরাপদ ও সমর্থিত অনুভব করে, তখন তারা বাইরের প্রলোভন সমূহের প্রতি কম আকৃষ্ট হয়।

পরিবার হল মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রথম শিক্ষাগার। শিক্ষার্থীদের মাদক দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ বা প্রবণতা কমাতে পারে এমন মূল্যবোধ ও নীতিগুলি পরিবার থেকেই আসে। যখন একটি পরিবার স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণ, সততা, এবং দায়িত্ববোধের মতো মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়, তখন শিক্ষার্থীরা মাদক দ্রব্যের মতো ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে দূরে থাকার জন্য সতেষ্ট হয়।

পারিবারিক পরিবেশে সুস্থ অভ্যাস ও জীবনযাপনের দৃষ্টান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য অমূল্য। যেসব পরিবার শারীরিক সুস্থতা, মানসিক ভালোবাসা, এবং সৃজনশীল উদ্যোগে জোর দেয়, সেই শিক্ষার্থীরা অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের প্রতি কম আকৃষ্ট হয়।

তাছাড়া পারিবারিক সংলাপ ও খোলামেলা আলোচনা শিক্ষার্থীদের মাদক দ্রব্যের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করতে সাহায্য করে। যখন শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকের সাথে মাদক দ্রব্যের প্রভাব, ক্ষতি এবং এর পরিণতি সম্পর্কে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারে, তারা সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে।

পরিশেষে আমি আমার প্রতিপক্ষ দলকে আহবান করে বলি- “ শিক্ষার্থীদের মাদক নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয় নয়, পরিবারের ভূমিকাই প্রধান।”  ধন্যবাদ মাননীয় সভাপতি ও ধন্যবাদ বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলী।

বিপক্ষ দলের- দ্বিতীয় বিতার্কিক 

সময়: ৫ মিনিট

“জয়-জয়-জয়
আজ বিশ্ব ভূবনময়
চারিদিকে একিই ধবনি ;
আমার বিদ্যালয় ।

বিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে
আজি আমি ধন্য ;
সালাম এবং শ্রদ্ধা তাদের
বিদ্যালয়ের জন্য ।

প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যারা
এই বিদ্যালয়র প্রান ;
বিদ্যালয়ের-ছাত্র হয়ে
গাই তাদের মহীয়ান ।”

ধন্যবাদ মাননীয় সভাপতি ও বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলী আমাকে আজকের বিতর্ক পর্বে কিছু বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য।

“আমরা যতই অধ্যয়ন করি ততই আমাদের অজ্ঞতাকে আবিষ্কার করি।”- বলেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক – ম্যারি শেলি। 

মাননীয় সভাপতি ও বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী জগতে মানুষের যত খারাপ অভ্যাস তৈরি হয় তার প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষের অজ্ঞতা ও নৈতিকতা অভাব। আর আমরা সঠিক নৈতিক শিক্ষা পেয়ে থাকি আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষাগুরুদের কাছ থেকে । যা আমাদের খারাপ অভ্যাস থেকে তথা মাদকগ্রহণ থেকে দূরে রাখে। মাননীয় বিচারকমন্ডলী, পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমানের মেয়ে ঐশী রহমানের কথাই বলি। যে মাদকের করালঘ্রাসে পথভ্রষ্ট হয়ে মাদকের টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৩ সালে ১৪ই আগস্ট পিতা-মাতাকে নিজ হাতে ছুরি দিয়ে হত্যা করে। এই  নির্মম ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড কী পারিবারিক শিক্ষা কি থামাতে পারল? প্রশ্ন রইল আমার প্রতিপক্ষের বন্ধুদের কাছে। এধরনের বিপদগামী ঐশীদের পারে সঠিক পথে আনতে একমাত্র বিদ্যালয় ও শিক্ষাগুরুর দীক্ষা।

মাননীয় সভাপতি আমি বলব  বিদ্যালয়ের প্রভাব ও শিক্ষা গুরুদের দীক্ষাই পারে বিপদগামীদের সঠিক পথে আনতে।

বিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও আচার-আচরণের গড়নের মূল ক্ষেত্র। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের সমবয়সীদের সাথে মিশে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক আচার-আচরণ, মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা শেখে। এই শিক্ষা তাদের জীবনের নানা পর্যায়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেয়।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা রকমের ক্রীড়া এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম থাকে, যা তাদের মনের বিকাশ ঘটায় এবং তাদেরকে মাদক দ্রব্যের মতো ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে দূরে রাখে। এই কার্যক্রমগুলো তাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের প্রতি উৎসাহিত করে। তাই পরিশেষে আমরা সবাই বলতে পারি “ মাদক নিয়ন্ত্রনে পরিবার নয়, বিদ্যালয়ের ভূমিকাই প্রধান।” ধন্যবাদ মাননীয় সভাপতি ও ধন্যবাদ বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলী।

পক্ষ দলের- তৃতীয় বিতার্কিক ও দলনেতা

সময়: ৫ মিনিট

ধন্যবাদ মাননীয় সভাপতি ও বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী আমাকে আজকে বিতর্কে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া জন্য। আজকের বিতর্কের প্রতিপ্রাদ্য বিষয় হলো মাদক নিরাময়। মাদক নিরাময়ে পবিবার কিংবা শিক্ষকের ভূমিকা উভয়ই প্রয়োজন তাতে কিন্তু আমার দ্বিমত নেই। মাননীয় সভাপতি ব্যক্তি জীবনে পরিবার কিংবা শিক্ষকের স্থান একই মনে হলেও তাদের  ভূমিকা কিংবা মর্যাদা সম্পূর্ণ ভিন্ন। 

পরিবার হলো একটি মুষ্ঠিমেয় সদস্যের সংগঠন। মূলত মানব জীবনের অস্থিত্ব টিকে রাখার জন্য পারিবারিক জীবন গঠিত হয়। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি। তার বিভিন্ন কারণ রয়েছে।

পরিবার একটি শিক্ষার্থীর জীবনের প্রাথমিক ও প্রধান শিক্ষাগার। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিদিনের সময়ের সিংহভাগ পরিবারেরই কাটিয়ে থাকে।  পরিবার থেকেই একজন শিক্ষার্থী জীবনের প্রথম পাঠ, মূল্যবোধ, এবং নীতি-নৈতিকতা শেখে। এই প্রাথমিক শিক্ষাই তাদের জীবনের ভিত্তি নির্মাণে সহায়তা করে, যা মাদক দ্রব্যের মতো বিপজ্জনক পথ থেকে দূরে রাখে।

পারিবারিক আবহ ও অন্তরঙ্গতা শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি সুরক্ষিত ও সমর্থনমূলক পরিবেশ তৈরি করে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। এই সমর্থন শিক্ষার্থীদের মাদক দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ হ্রাস করে এবং তাদের সুস্থ জীবনযাপনে উৎসাহিত করে।

পারিবারিক শিক্ষা ও অনুশীলন শিক্ষার্থীদের জীবনে দায়িত্ববোধ, সচেতনতা, এবং সঠিক পথে চলার মানসিকতা গড়ে তোলে। যখন শিক্ষার্থীরা পারিবারিক পরিবেশে নিয়মিত আলোচনা, মূল্যবোধ এবং লক্ষ্য নির্ধারণের অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়, তখন তারা জীবনের বাঁকে বাঁকে আসা বিভিন্ন প্রলোভন থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারে।

পারিবার শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি স্থায়ী ও সুদৃঢ় সমর্থন সিস্টেম হিসেবে কাজ করে। যখন শিক্ষার্থীরা মানসিক বা সামাজিক চাপের মুখে পড়ে, তখন পারিবারিক সমর্থন তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় এবং মনোবল বৃদ্ধির উৎস হয়ে ওঠে।

পারিবারিক মানদণ্ড ও অভ্যাস শিক্ষার্থীদের নিজেদের চিন্তা-চেতনা এবং সিদ্ধান্ত নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। এই প্রভাব তাদের সুস্থ ও নৈতিক পছন্দসমূহ করতে সহায়তা করে, যা মাদক দ্রব্য গ্রহণের মতো ক্ষতিকারক পথ থেকে তাদের দূরে রাখে।

সম্মানিত বিচারক এবং শ্রোতাগণ, এসমস্ত তথ্যের আলোকে আমরা একমত পোষন করতে পারি- শিক্ষার্থীদের জীবনে মাদক দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ ও প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে পরিবারের ভূমিকাই প্রধান। ধন্যবাদ মাননীয় সভাপতি ও বিজ্ঞবিচারকমণ্ডলী।

বিপক্ষ দলের- তৃতীয় বিতার্কিক ও দলনেতা

সময়: ৫ মিনিট

ধন্যবাদ মাননীয় সভাপতি ও বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী আমাকে আজকে বিতর্কে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া জন্য।

আজকের এই মূল্যবান বিতর্কে আমি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিদ্যালয়ের প্রভাব ও তার শিক্ষার্থীদের মাদক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব নিয়ে আমার বক্তব্য পেশ করছি। 

মাননীয় সভাপতি ব্যক্তি জীবনে বিদ্যালয় বা শিক্ষকের অবদান সবচেয়ে বেশি। আমাদের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের  এক বক্তব্যে প্রকাশে পেয়েছে যে, মাদক নিরাময়ে শিক্ষকের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে আমি আমার প্রতিপক্ষ বন্ধুদের একটি প্রশ্ন করতে চাই সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মতো সম্মানীত ব্যক্তির বক্তব্য কি অযৌক্তিক।

মাননীয় সভাপতি আমাদের সমাজে প্রায় ৭০ লক্ষ ব্যক্তি মাদকাসক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ব্যক্তি হলো তরুনরা। এ তরুনদের মাদকগ্রহণের মূল কারণ হলো পারিবারিক চাপ। পড়াশোনা, চাকরি-বাকরি, অর্থ উপার্জন সংক্রান্ত তরুনদের পরিবার মানসিক চাপে রেখেছে। এটি উইকিপিডিয়াসহ নানা প্রতিবেদনে তা প্রকাশ পেয়েছে। আমার প্রতিপক্ষ দলের কাছে আমার প্রশ্ন, যে পরিবার মাদকগ্রহণে মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সে পরিবার কীভাবে শিক্ষার্থীদের বা তরুনদের মাদক মুক্ত রাখবে?

বিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধির কেন্দ্র। এখানে তারা জীবনের বিভিন্ন দিক, যেমন মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব, সামাজিক নীতি, এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করে। এই জ্ঞান তাদের জীবনের নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য সজ্জিত করে।

বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত সচেতনতা মূলক কর্মসূচি ও সমাজের স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মাদক দ্রব্যের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে থাকে। এই প্রক্রিয়াগুলো তাদের মধ্যে সুস্থ জীবনযাপনের প্রতি আগ্রহ জাগায় এবং মাদক দ্রব্যের বিরুদ্ধে সচেতন করে। 

বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জীবনের একটি বৃহত্তর অংশ জুড়ে রয়েছে এবং তাদের মানসিক বিকাশে একটি প্রধান ভূমিকা রাখে। এখানে তারা সমাজের নানা দিক ও জীবনের নানা প্রশ্ন নিয়ে শিখে থাকে, যা তাদের মাদক দ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ কমাতে সহায়ক।

বিদ্যালয়ে প্রচালিত বিশেষ কর্মসূচি, যেমন স্বাস্থ্য শিক্ষা, মাদক নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা, এবং সমাজ সেবা কার্যক্রম, শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলে এবং তাদের ইতিবাচক দিকে নিয়ে যায়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। তারা শুধু বইয়ের জ্ঞান দেন না, জীবনের শিক্ষাও দেন। একজন ভালো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, যেমন মাদক দ্রব্যের বিপদ, সম্পর্কে সচেতন করতে পারে। তাই পরিশেষে আমরা বলতে পারি। “ মাদক নিয়ন্ত্রনে পরিবার নয়, বিদ্যালয়ের ভূমিকাই প্রধান।” ধন্যবাদ মাননীয় সভাপতি ও ধন্যবাদ বিজ্ঞ বিচারকমন্ডলী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *