প্রিয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা, ২০২১ সালে বাংলাদেশে নতুন শিক্ষাক্রম রূপরেখা তৈরি হয়েছে। এই রূপরেখা অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক ও শ্রেণিভিত্তিক যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই ও শিক্ষকদের জন্য নতুন বইয়ের পাশাপাশি শিক্ষক সহায়িকা তৈরি করা হয়েছে। এ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
মানবদেহে হৃদপিণ্ড যেমন দেহকে সচল রাখে ঠিক তেমনি শিক্ষকরা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নকে সচল রাখবেন একবারে কেন্দ্রে অবস্থান করে। আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কেন এই নতুন শিক্ষাক্রম? আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, আমাদের দেশে অতীতে শিক্ষাক্রমের যে শিখন-শেখানো পদ্ধতি ব্যবহ্রত হয়েছে তা বহুদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে।
২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করতে আমাদের শিখন-শেখানো পদ্ধতিতে পরিবর্তন প্রয়োজন। এছাড়াও পরিবর্তনশীল বিশ্বে বর্তমান সময়ের কর্মজগতের অনেক কিছুই ভবিষ্যতে যেমন থাকবে না, ভবিষ্যতেও তেমনি অনেক নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে যা বর্তমান সময়ে ধারণা করা সম্ভব নয়।
এসব চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তার টেকসই ও কার্যকর সমাধান এবং সম্ভাবনার পূর্ণ সুফল গ্রহণের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসহ দূরদর্শী, সংবেদনশীল, অভিযোজন-সক্ষম, মানবিক এবং যোগ্য বিশ্ব-নাগরিক প্রয়োজন।
এই অভিলক্ষ্য পূরণের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার শিক্ষা। আর সেজন্য শিক্ষার আধুনিকায়ন ছাড়া উপায় নেই। আর এই আধুনিকায়নের শুরুটা হতে হবে অবশ্যই একটি কার্যকর যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে যা সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের মূল উদ্দেশ্য কী ?
নতুন শিক্ষাক্রমের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীরা আনন্দঘন পরিবেশে বিভিন্ন বাস্তব অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদেরকে বৈশ্বিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ধাপ-
নতুন শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য ধারাবাহিক শিখনকালীন মূল্যায়ন, ষান্মাসিক ও সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্ধারণ করা হয়েছে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা প্রতিটা অভিজ্ঞতাপর শিক্ষার্থীদেরকে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করবেন। মূল্যায়নের সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে ষাল্মাসিক মূল্যায়ন শিখনকালীন মূল্যায়নের সমন্বয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্য মূল্যায়নের ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করবেন।
শিখনকালীন মূল্যfয়নের সুবিধাসমূহ-
নতুন শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নের উপর সরকার জোর তাগিদ দিচ্ছে । শিখন কালীন মূল্যায়নের অনেক সুবিধা রয়েছে। শিখন কালীন মূল্যায়নের ব্যবস্থা করলে শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে অত্যন্ত সহজে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমবে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আন্ত:যোগাযোগ ও সম্পর্ক বাড়বে, প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সমস্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থী কোনো কারণে ঝরে পড়লে অর্জিত যোগ্যতা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে বা কিছু একটা করে সে সামনের দিকে এগোতে পারবে।