বিতর্কের বিষয়— “তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করছে।”
✦ পক্ষে প্রথম বক্তার বক্তব্য
মাননীয় সভাপতি,বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী,আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ,উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দ এবং আমার পক্ষ ও বিপক্ষ দলের বিতার্কিক বন্ধুদের প্রতি জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আজকের বিতর্কের বিষয়— “তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করছে।”
মাননীয় সভাপতি , তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার বলতে বোঝায়— শিক্ষার্থীদের সীমাহীন, অপ্রয়োজনীয় ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন গেমস কিংবা বিনোদনমূলক প্ল্যাটফর্মে সময় ব্যয় করা। আর পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট হওয়া বলতে বোঝায়— বই পড়ার প্রতি অনাগ্রহ, পাঠ্যবইয়ের প্রতি উদাসীনতা, মনোযোগহীনতা ও একাডেমিক ফলাফলের অবনতি।
সভাপতি মহোদয়, চলুন বাস্তবতার আলোকে বিষয়টি দেখি। এক শিক্ষা জরিপ অনুযায়ী, আমাদের দেশের প্রায় ৭০% শিক্ষার্থী প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা মোবাইল ফোনে ব্যয় করে— যার বেশিরভাগ সময় চলে যায় ফেসবুক, ইউটিউব বা অনলাইন গেমসে। এই দীর্ঘ সময় নষ্ট হওয়ার কারণে তাদের বই পড়ার অভ্যাস ক্রমশ কমছে। ফলাফল— পরীক্ষায় গড়পড়তা নম্বর, পাঠ্যপুস্তকের প্রতি অনিহা এবং জ্ঞানের ঘাটতি।
বাস্তব একটি ঘটনাই বিষয়টিকে স্পষ্ট করি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিচ্ছু অনেক শিক্ষার্থীকে আমরা দেখি, তারা পাঠ্যবইয়ের বদলে ইউটিউব বা টিকটকে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটায়। এর ফলে ভর্তি পরীক্ষায় তাদের ফলাফল আশানুরূপ হয় না। অথচ তারা যদি সেই সময়টি পাঠ্যবই পড়ায় ব্যয় করত, তবে ফলাফল সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারত।
মাননীয় সভাপতি, তথ্য প্রযুক্তি যদি নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করা যেত, তবে হয়তো সমস্যা হতো না। কিন্তু “অবাধ ব্যবহার” শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কাড়ে ভিডিও গেমস, শর্ট ভিডিও, অনলাইনের জুয়া, অনলাইনে কাউকে বুলিং করা, চ্যাটিং আর অনর্থক বিনোদনে। যেমন বলা হয়—
“যেখানে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর কথা, সেখানে বিনোদনের অগ্নিশিখায় জ্বলে ছাই হচ্ছে পাঠ্যাভ্যাস।”
আমি আমার প্রতিপক্ষের কাছে একটি প্রশ্ন রেখে যেতে চাই—
যদি তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট না করত, তবে কেন আমরা আজকাল বইয়ের দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখতে পাই না? কেন পাঠ্যপুস্তক শেষ করতে গিয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লান্ত বোধ করে, অথচ একই শিক্ষার্থী ৫-৬ ঘণ্টা মোবাইল স্ক্রলে আনন্দ খুঁজে পায়?
পাঠ্যাভ্যাসের পতনের জন্য অবাধ তথ্য প্রযুক্তিই দায়ী—এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
অতএব, আমি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি—তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস ধ্বংস করছে।
পরিশেষে মাননীয় সভাপতি ও বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ।
✦ বিপক্ষে প্রথম বক্তার বক্তব্য
মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দ, এবং আমার পক্ষ ও বিপক্ষ দলের প্রিয় বিতার্কিক বন্ধুদেরকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আজকের আলোচ্য বিষয়— “তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করছে।”
মাননীয় সভাপতি, প্রথমেই বিতর্কের টপিকটিকে সংজ্ঞায়িত করতে চাই।
তথ্য প্রযুক্তি বলতে বোঝায়— ইন্টারনেট, মোবাইল, কম্পিউটার, ই-বুক, অনলাইন লাইব্রেরি, শিক্ষা অ্যাপস, ভার্চুয়াল ক্লাসরুম ইত্যাদি। আর পাঠ্যাভ্যাস বলতে বোঝায়— বই-পুস্কক পড়া, নতুন কিছু শেখার আগ্রহ, তথ্য গ্রহণের মানসিকতা, বই বা অন্য মাধ্যম থেকে জ্ঞান আহরণ। এখন পক্ষ দল যেভাবে বলেছে, অবাধ প্রযুক্তি মানেই নষ্ট পাঠ্যাভ্যাস— তা একেবারেই সঠিক নয়।
মাননীয় সভাপতি, পক্ষের প্রথম বক্তা একটি প্রশ্ন রেখেছেন—
“যদি প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট না করে, তবে কেন বইয়ের দোকানে ভিড় কমছে?”
আমার উত্তর হচ্ছে— বইয়ের দোকানে ভিড় কমছে ঠিকই, তবে পাঠ্যাভ্যাস কমছে না; বরং পড়ার ক্ষেত্র ও উপকরণ পরিবর্তিত হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন লাইব্রেরিতে গিয়ে বই কেনার পরিবর্তে অনলাইন লাইব্রেরি, পিডিএফ, গুগল বুকস, কিংবা কিণ্ডল ব্যবহার করছে। অর্থাৎ বই পড়া বন্ধ হয়নি, বরং রূপ পরিবর্তিত হয়েছে । এটা নষ্ট নয়, বরং আধুনিক রূপে উন্নয়ন।
মাননীয় সভাপতি, প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস ধ্বংস করছে— এটি একটি একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি। বরং বলা যায়, প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাসকে বহুমাত্রিক ও সমৃদ্ধ করছে। একসময় যেখানে একজন শিক্ষার্থী শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত, এখন সে ইউটিউবে দক্ষ শিক্ষকদের লেকচার, অনলাইন কোর্স, কিংবা বিদেশি লেখকের গবেষণাপত্র পড়ছে।
বাস্তব উদাহরণ দিই। মহামারী কোভিড-১৯ এর সময় আমাদের দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পরও অনলাইন ক্লাস ও শিক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে। যদি প্রযুক্তি সত্যিই পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করত, তবে এ সময়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজগৎ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পড়াশোনার ধারাবাহিকতাকে বজায় রেখেছে।
মাননীয় সভাপতি, বলা হয়— “যে হাত স্মার্টফোন চালায়, সেই হাতেই খুলে যায় জ্ঞানের নতুন দিগন্ত।”
অতএব, প্রযুক্তি ধ্বংস করছে না, বরং পাঠ্যাভ্যাসকে সময়োপযোগী করছে।
এবার আমি প্রতিপক্ষকে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই— যদি তথ্য প্রযুক্তি সত্যিই পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করত, তবে কেন আজকের যুগে শিক্ষার্থীরা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যক গবেষণা প্রবন্ধ, আন্তর্জাতিক বই এবং বৈজ্ঞানিক তথ্যের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে? কেন এখনকার শিক্ষার্থীরা গুগল স্কলার, রিসার্চগেট কিংবা কোরসেরা ব্যবহার করে বিশ্বমানের জ্ঞান আহরণ করছে? মাননীয় সভাপতি, প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস ধ্বংস করছে—এ কথা ভিত্তিহীন।
পরিশেষে আমি দৃঢ়ভাবে বলছি—
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করছে না; বরং এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি- আল্লাহ হাফেজ।
✦ পক্ষে দ্বিতীয় বক্তার বক্তব্য
মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত দর্শকবৃন্দ, এবং প্রিয় বিতার্কিক বন্ধুদের প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আজকের আলোচ্য বিষয়— “তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করছে।”
সভাপতি মহোদয়, পক্ষে প্রথম বক্তা বিষয়টির সার্বিক দিক ব্যাখ্যা করেছেন। আমি দ্বিতীয় বক্তা হিসেবে বিষয়টির গভীরতর দিক উন্মোচন করার চেষ্টা করব।
প্রথমেই, বিপক্ষের প্রথম বক্তা আমাদের একটি প্রশ্ন রেখেছেন— “যদি প্রযুক্তি সত্যিই পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করত, তবে কেন আজকের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বেশি গবেষণা প্রবন্ধ, আন্তর্জাতিক বই কিংবা বৈজ্ঞানিক তথ্য পড়ছে?”
আমার উত্তর হচ্ছে— হ্যাঁ, কিছু শিক্ষার্থী গবেষণাপত্র পড়ে, কেউ কেউ অনলাইন লাইব্রেরি ব্যবহার করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো— সেই সংখ্যা অতি নগণ্য। পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের ৮০% শিক্ষার্থী ইন্টারনেটে মূলত ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব, অনলাইন গেমস এবং বিনোদনে সময় ব্যয় করে। গবেষণাপত্র বা অনলাইন লাইব্রেরি ব্যবহারকারীর সংখ্যা এর তুলনায় একেবারেই নগণ্য। সুতরাং প্রযুক্তির ‘অবাধ ব্যবহার’ আসলেই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বই থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিনোদনের দিকে।
মাননীয় সভাপতি, বাস্তব উদাহরণ দিই। ২০২৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারী মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৬৫% শিক্ষার্থী দিনে গড়ে ৩ ঘণ্টার বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করে, অথচ পাঠ্যপুস্তক পড়ারক্ষেত্রে তারা দেয় মাত্র ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। প্রশ্ন হলো— এই প্রবণতা কি পাঠ্যাভ্যাসকে সমৃদ্ধ করছে, নাকি ধ্বংস করছে? উত্তর স্পষ্ট— ধ্বংস করছে।
বিপক্ষের বন্ধুরা বলেছেন, পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট হচ্ছে না, বরং রূপ পরিবর্তন হয়েছে। আমি বলব— রূপান্তর আর ধ্বংসের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। যদি সত্যি পাঠ্যাভ্যাস রূপান্তরিত হতো, তবে পরীক্ষার ফলাফলে উন্নতি ঘটত, কিন্তু আমরা বরং দেখছি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগের অভাব, পরীক্ষায় ক্রমাগত শিক্ষার্থীদের ফলাফলে ভরাডুবি। তার বাস্তব প্রমাণ ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল, যেখানে ১৯ লক্ষ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ পরীক্ষার্থী।
মাননীয় সভাপতি, আমরা সবাই জানি— “অতিরিক্ত বিনোদনই শিক্ষার প্রধান অন্তরায়।”
আজকের শিক্ষার্থী যখন পাঠ্যবই হাতে নেয়, তখন বারবার মোবাইলের নোটিফিকেশন তাকে বিভ্রান্ত করে। একদিকে বই, আরেকদিকে স্ক্রল— শিক্ষার্থী কোনটা বেছে নেবে? বাস্তবে দেখা যায়, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বেছে নিচ্ছে মোবাইলকে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে পাঠ্যাভ্যাসের মূলভিত্তি।
এখন বিপক্ষের বন্ধুদের পাল্টা একটি প্রশ্ন রাখতে চাই—
যদি প্রযুক্তি সত্যিই পাঠ্যাভ্যাস সমৃদ্ধ করত, তবে কেন প্রতি বছর আমাদের দেশে পাঠ্যবই পড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়া এবং পরীক্ষায় ফেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে? আশা করি উত্তর দিয়ে যাবেন।
পরিশেষে আমি দৃঢ়ভাবে বলছি-
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস ধ্বংস করছে, এবং আজকের বাস্তবতার প্রমাণই এ কথাকে সুদৃঢ় করছে।
মাননীয় সভাপতি ও বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি-আল্লাহ হাফেজ।
✦ বিপক্ষে দ্বিতীয় বক্তার বক্তব্য
মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দ এবং আমার প্রিয় বিতার্কিক বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আজকের আলোচ্য বিষয়— “তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করছে।”
মাননীয় সভাপতি, প্রথমেই আমি পক্ষ দলের দ্বিতীয় বক্তার উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দিতে চাই। তিনি জিজ্ঞাসা করেছেন—
“যদি প্রযুক্তি পাঠ্যাভ্যাস সমৃদ্ধ করত, তবে কেন প্রতি বছর পরীক্ষায় ফেলের সংখ্যা বাড়ছে?”
আমার উত্তর হলো— পরীক্ষার ফলাফল পাঠ্যাভ্যাসের একমাত্র মানদণ্ড নয়। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো মুখস্থ নির্ভর। পরীক্ষায় ব্যর্থতার কারণ প্রযুক্তি নয়, বরং সেকেলে শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষক সংকট, এবং পাঠ্যবইকে একমাত্র শিক্ষার উৎস ধরে নেওয়া। বাস্তবে দেখা যায়, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পরীক্ষায় ভালো করতে না পারলেও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দক্ষতা অর্জন করছে এবং কর্মক্ষেত্রে সফল হচ্ছে। সুতরাং পরীক্ষার ফল দিয়ে পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট হওয়ার যুক্তি দেওয়া একেবারেই যথার্থ নয়।
এখন আসি মূল প্রসঙ্গে।
মাননীয় সভাপতি, তথ্য প্রযুক্তি মানে শুধু গেমস বা টিকটক নয়। প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার মানেই অনলাইনে জ্ঞান আহরণের স্বাধীনতা। আজকের শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যবই নয়, বরং ই-বুক, ব্লগ, আর্টিকেল, অনলাইন কোর্স, এবং আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র পড়ছে। এটা কি পাঠ্যাভ্যাস ধ্বংস করছে? না, বরং পাঠ্যাভ্যাসকে বৈচিত্র্যময় করছে।
বাস্তব উদাহরণ দিই। ঢাকার এক কলেজের শিক্ষার্থী “কোরসেরা” ও “ইউডেমি”-তে ফ্রি কোর্স করে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখেছে। সেই একই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় হয়তো গড়পড়তা করেছে, কিন্তু তার জ্ঞান ও দক্ষতা আজ তাকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছে। যদি প্রযুক্তি তার পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করত, তবে কি এই সফলতা সম্ভব হতো?
সভাপতি মহোদয়, বলা হয়—
“জ্ঞান এক সমুদ্র, বই তার তীর, আর প্রযুক্তি হলো সেই নৌকা—যা শিক্ষার্থীকে দ্রুত মাঝপথে পৌঁছে দেয়।”
অতএব, প্রযুক্তি ধ্বংস নয়, বরং শিক্ষাকে সহজ ও আকর্ষণীয় করছে।
এখন আমি পক্ষ দলের বন্ধুদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই-
যদি তথ্য প্রযুক্তি সত্যিই শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস ধ্বংস করত, তবে কেন আমরা আজ গ্রামীণ শিক্ষার্থীদেরও মোবাইল ফোনে ইংরেজি শেখার ভিডিও দেখতে পাই? কেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ইউটিউব টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে জটিল গণিত সমাধান শিখে নিচ্ছে? এটা কি নষ্ট হওয়া পাঠ্যাভ্যাস, নাকি সমৃদ্ধ পাঠ্যাভ্যাসের নতুন অধ্যায়?
সভাপতি মহোদয়, পক্ষ দল কেবল নেতিবাচক দিককে বড় করে দেখাচ্ছে। অথচ সত্য হলো— প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাসে জ্ঞান অর্জনের বহুমাত্রিক দরজা খুলে দিয়েছে।
পরিশেষে আমি দৃঢ়ভাবে বলছি—
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করছে না; বরং পাঠ্যাভ্যাসকে আধুনিক, বিস্তৃত ও সময়োপযোগী করে তুলছে।
মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি-আল্লাহ হাফেজ।
✦ পক্ষে তৃতীয় বক্তার (দলনেতা) বক্তব্য
মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত শ্রোতাবৃন্দ এবং আমার পক্ষ ও বিপক্ষ দলের প্রিয় বিতার্কিক বন্ধুদের প্রতি জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আজকের আলোচ্য বিষয়— “তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করছে।”
সভাপতি মহোদয়, পক্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় বক্তা ইতিমধ্যেই বিষয়টির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরেছেন। আমি দলনেতা হিসেবে সেগুলো সারসংক্ষেপ করব এবং বিপক্ষের ভুল যুক্তিগুলো খণ্ডন করব।
প্রথমেই বিপক্ষ দলের দ্বিতীয় বক্তা আমাদের একটি প্রশ্ন রেখেছেন—
“যদি তথ্য প্রযুক্তি পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করত, তবে কেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও ইউটিউব দেখে ইংরেজি শেখে বা গণিত সমাধান করে?”
আমার উত্তর হচ্ছে— হ্যাঁ, কিছু শিক্ষার্থী প্রযুক্তি ব্যবহার করে পড়াশোনা করছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আলো ঝলমল শহরে যেমন বিদ্যুৎ বেশি জ্বলে, ঠিক তেমনি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারকারী সংখ্যাও নগণ্য। বাস্তব চিত্র হলো— শতকরা ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী প্রযুক্তি ব্যবহার করছে বিনোদনে, আর মাত্র ২০ ভাগ করছে পড়াশোনায়। যে অল্প কয়েকজন ইউটিউব দেখে পড়ছে, তাদের দোহাই দিয়ে প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারকে সমর্থন করা যায় না।
সভাপতি মহোদয়, বাস্তবতা হলো— তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের হাতে যখন সীমাহীন বিনোদনের সুযোগ দিচ্ছে, তখন তাদের মনোযোগ বই থেকে সরে যাচ্ছে। ঢাকার একটি নামকরা কলেজে করা জরিপে দেখা গেছে— প্রায় ৭২% শিক্ষার্থী প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা মোবাইল ব্যবহার করে, কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে সময় দেয় গড়ে মাত্র ১ ঘণ্টা। এই কি পাঠ্যাভ্যাস সমৃদ্ধ হওয়ার লক্ষণ? বরং এটি পাঠ্যাভ্যাস ধ্বংস হওয়ারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
বিপক্ষ বলেছে, প্রযুক্তি বইয়ের বিকল্প নয়, বরং প্রসার। আমি বলব— প্রসার তখনই হয়, যখন ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত থাকে। অবাধ ব্যবহার প্রসার নয়, বরং অতিরিক্ত বিনোদনের ফাঁদ।
সভাপতি মহোদয়, আমরা ভুলে গেলে চলবে না—
“বই মানুষকে করে মানুষ, কিন্তু স্ক্রল মানুষকে করে যান্ত্রিক।”
আজকের শিক্ষার্থী বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে না, বরং পর্দার পর্দা উল্টাচ্ছে। এর ফলে জ্ঞানের গভীরতা কমে যাচ্ছে, মনোযোগ ছিন্নভিন্ন হচ্ছে।
এখন আমি বিপক্ষকে পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
যদি তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার সত্যিই পাঠ্যাভ্যাস সমৃদ্ধ করত, তবে কেন আমরা দেখি— শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার সময় বইয়ের ওপর মনোযোগ দিতে না পেরে রাত জেগে ফেসবুক স্ক্রল করছে? কেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন যে ডিজিটাল আসক্তি আমাদের তরুণ প্রজন্মের পড়াশোনার ক্ষতি করছে?
সভাপতি মহোদয়, সব মিলিয়ে স্পষ্ট— তথ্য প্রযুক্তি সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত হলে তা সহায়ক, কিন্তু অবাধ হলে তা শিক্ষার্থীর পাঠ্যাভ্যাসের জন্য ভয়ংকর।
পরিশেষে আমি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি—
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস ধ্বংস করছে।
মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
✦ বিপক্ষে তৃতীয় বক্তার (দলনেতা) বক্তব্য
মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, উপস্থিত দর্শকবৃন্দ, এবং আমার পক্ষ ও বিপক্ষ দলের প্রিয় বিতার্কিক বন্ধুদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
আজকের আলোচ্য বিষয়— “তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করছে।”
মাননীয় সভাপতি, বিপক্ষ দলের প্রথম ও দ্বিতীয় বক্তা ইতিমধ্যে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। আমি দলনেতা হিসেবে আমাদের অবস্থানকে আরও দৃঢ় করব এবং পক্ষ দলের ভুল ধারণা খণ্ডন করব।
প্রথমেই আসি পক্ষ দলের তৃতীয় বক্তার প্রশ্নে। তারা জানতে চেয়েছেন—
“যদি তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার পাঠ্যাভ্যাস সমৃদ্ধ করত, তবে কেন পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা বইয়ের ওপর মনোযোগ দিতে না পেরে ফেসবুক স্ক্রল করে?”
আমার উত্তর হচ্ছে— এটি প্রযুক্তির দোষ নয়, বরং শিক্ষার্থীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব। কলম দিয়ে যেমন কেউ সুন্দর কবিতা লিখতে পারে, আবার কেউ অনর্থক আঁকিবুঁকি কাটতে পারে—দোষ কি তবে কলমের? একেবারেই নয়। একইভাবে, প্রযুক্তি একটি মাধ্যম, এটি ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্যের ওপর নির্ভর করে। শিক্ষার্থী যদি সচেতন হয়, তবে প্রযুক্তিই তার পাঠ্যাভ্যাসকে সমৃদ্ধ করবে।
সভাপতি মহোদয়, প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আজ বইয়ের বাইরে নতুন জ্ঞানভান্ডারে প্রবেশ করছে। ই-বুক, অনলাইন লাইব্রেরি, গুগল স্কলার, কোরসেরা, খান একাডেমি—এসব প্ল্যাটফর্ম পাঠ্যাভ্যাসের বিকল্প নয়, বরং পরিপূরক।
বাস্তব উদাহরণ দিই। কুষ্টিয়ার এক গ্রামীণ স্কুলের শিক্ষার্থী ইউটিউব ভিডিও দেখে বিজ্ঞান মেলা প্রজেক্ট তৈরি করে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছে। প্রশ্ন হলো— প্রযুক্তি কি তার পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করেছে, নাকি সমৃদ্ধ করেছে? উত্তর স্পষ্ট— সমৃদ্ধ করেছে।
সভাপতি মহোদয়, বলা হয়—
“প্রযুক্তি হলো আলোর প্রদীপ, আর পাঠ্যাভ্যাস সেই প্রদীপের আলোয় প্রস্ফুটিত ফুল।”
অতএব, প্রযুক্তি ধ্বংস নয়, বরং আলোকিত করছে শিক্ষার্থীর পাঠ্যাভ্যাস।
এখন আমি পক্ষ দলকে পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
যদি সত্যিই প্রযুক্তি পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করত, তবে কেন আজ বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি শিক্ষার্থী ই-বুক রিডার, ডিজিটাল লাইব্রেরি ও অনলাইন কোর্সে অংশ নিচ্ছে? কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিজেরাই অনলাইন ক্লাস, ভার্চুয়াল লাইব্রেরি চালু করছে? সরকার কি কখনো এমন কোনো কিছুকে উৎসাহ দেবে যা পাঠ্যাভ্যাস ধ্বংস করে?
অতএব, আমি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করছি—
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস ধ্বংস করছে না; বরং এটি নতুন প্রজন্মের পাঠ্যাভ্যাসকে প্রসারিত, আধুনিক এবং সময়োপযোগী করে তুলছে।
মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি-আল্লাহ হাফেজ।
🎤 পক্ষে দলনেতার যুক্তিখণ্ডন
মাননীয় সভাপতি, বিজ্ঞ বিচারকমণ্ডলী, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ এবং উপস্থিত সুধীবৃন্দকে আবারও জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
বিপক্ষ দলের তিনজন সম্মানিত বক্তা একে একে নানা যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য—তাঁদের যুক্তির ভিত কাঁচের ঘরের মতো, একটু ধাক্কাতেই ভেঙে পড়বে।
বিপক্ষের প্রথম বক্তা বলেছিলেন—“তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ভাণ্ডার খুলে দিয়েছে, তাই পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট নয় বরং উন্নত হচ্ছে।”
আমার উত্তর খুব সরল—মোবাইল হাতে নিলেই শিক্ষার্থী প্রথমে বই নয়, খোঁজে ফেসবুক, ইউটিউব শর্টস কিংবা টিকটকের স্ক্রল! জ্ঞানের ভাণ্ডার নয়, বরং বিনোদনের ফাঁদে পড়ে তারা বইয়ের স্বাদ ভুলে যাচ্ছে।
বিপক্ষের দ্বিতীয় বক্তা বললেন—“ডিজিটাল বই বা ই-বুক এখন কাগজের বইয়ের বিকল্প।”
প্রশ্ন হচ্ছে, ই-বুক খোলার আগে শিক্ষার্থী কতবার সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন চেক করে? কাগজের বই পড়ার সময় কোনো নোটিফিকেশন এসে মনোযোগ কেড়ে নেয় না। ফলে, ই-বুকের সঙ্গে পাঠ্যাভ্যাস নয়, বরং বিভ্রান্তির আসন তৈরি হয়।
বিপক্ষের তৃতীয় বক্তা যুক্তি দিলেন—“অনলাইন গবেষণা শিক্ষার্থীদের বেশি পড়াশোনা করতে উৎসাহিত করে।”
আমি বলি—গবেষণার নামে গুগলে সার্চ দিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রথম লিঙ্কের সারাংশ কপি করে জমা দেয়, অথচ পুরো বই পড়ার ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। গবেষণার গভীরতা হারিয়ে যাচ্ছে, আর পাঠ্যাভ্যাস? সে তো অনেক আগেই কম্পিউটার স্ক্রিনে নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে!
মাননীয় বিচারকমণ্ডলী, বিপক্ষ যতই যুক্তি দেখাক, বাস্তবতা হলো—আজকের শিক্ষার্থী হাতে বই নয়, হাতে মোবাইল ধরে ঘুমোতে যায়, আর সকালের সূর্যের আলোয় নয়, স্ক্রিনের নীল আলোয় দিন শুরু করে।
অতএব, এটা স্পষ্ট—তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাসকে ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। ধন্যবাদ।
🎤 বিপক্ষে দলনেতার যুক্তিখণ্ডন
মাননীয় সভাপতি, সম্মানিত বিচারকমণ্ডলী, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এবং উপস্থিত শ্রোতৃমণ্ডলীকে আবারও জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
পক্ষের দল তিনজন বক্তা একের পর এক আমাদের সামনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় ছুড়ে দিয়েছেন। এখন আমি সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে বিষয়টির আসল রূপ পরিষ্কার করতে চাই।
👉 প্রথম বক্তার প্রশ্ন ছিল – “শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া, গেমস নিয়ে ব্যস্ত থেকে বইয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে না কি?”
💡 আমার উত্তর, প্রযুক্তি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; আজকের শিক্ষার্থী ঠিকই গুগল বুকস, কিণ্ডল, বা অনলাইন লাইব্রেরি থেকে জ্ঞান আহরণ করছে। বই হাতে না থাকলেও, বই মনের ভেতরেই রয়েছে। বলা যায়, বইয়ের রূপ বদলেছে, হারিয়ে যায়নি।
👉 দ্বিতীয় বক্তা বলেছিলেন – “তথ্য প্রযুক্তির কারণে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ছড়িয়ে পড়ছে, তারা একাগ্রভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না।”
💡 আমার যুক্তি হলো, মনোযোগের ছেদ সৃষ্টি করে না প্রযুক্তি, বরং ভুল ব্যবহারই মনোযোগ নষ্ট করে। প্রযুক্তির মাধ্যমে নোটস, ভিডিও লেকচার, শিক্ষামূলক অ্যাপ—এসবই শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়াচ্ছে। যেমন, খান একাডেমি কিংবা কোরসেরা হাজারো শিক্ষার্থীকে একাগ্রভাবে পড়াশোনায় যুক্ত করছে।
👉 তৃতীয় বক্তা প্রশ্ন করেছেন – “প্রযুক্তির আসক্তি শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাসকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে না তো?”
💡 আমি বলব, না। আসক্তি সৃষ্টি করে না প্রযুক্তি, আসক্তি তৈরি হয় নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে। যেমন কলম দিয়ে কবিতা যেমন লেখা যায়, তেমনি খুনের হুমকিও লেখা যায়। দোষ কি কলমের? না, দোষ ব্যবহারকারীর। ঠিক তেমনিভাবে প্রযুক্তি হলো শিক্ষার্থীর হাতের সবচেয়ে শক্তিশালী কলম, যা পাঠাভ্যাস ধ্বংস নয়, বরং নতুন আঙ্গিকে বিকশিত করছে।
📌 মাননীয় বিচারকমণ্ডলী,
প্রযুক্তি শিক্ষার্থীর পাঠ্যাভ্যাসকে ধ্বংস করছে—এটি একেবারেই একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি। বাস্তব হলো, প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সীমাহীন করেছে, সময় বাঁচিয়েছে, এবং পড়াশোনাকে আরও আকর্ষণীয় ও সহজলভ্য করেছে।
তাই শেষ কথা, তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস নষ্ট করছে না; বরং পাঠ্যাভ্যাসকে যুগোপযোগী করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিচ্ছে। ধন্যবাদ।