প্রোগ্রামিং ভাষা
কম্পিউটারকে যেকোনো নির্দেশ দিতে গেলে কম্পিউটার বুঝতে পারে এমন ভাষায় নির্দেশ লিখতে হয়। কম্পিউটারসহ যেকোনো ইলেক্ট্রনিক বা ডিজিটাল ডিভাইস শুধুমাত্র ০ আর ১ কে বুঝতে পারে। শুধু ০ আর ১ দিয়ে আমাদের নির্দেশগুলো লিখে নেওয়াটা কঠিন। তাহলে কম্পিউটারের সাথে কীভাবে আমরা যোোগাযোোগ করব?
এমন কিছু ভাষা আছে, যেখানে ওই ভাষার রীতিনীতি অনুসরণ করে নির্দেশ লিখলে কম্পিউটার সেই ভাষাকে সহজেই বাইনারিতে অথবা হেক্সাডেসিম্যালে রূপান্তর করে নিয়ে নির্দেশগুলো বাস্তবায়ন করে। এই ভাষাগুলোোকে বলা হয় প্রোগ্রামিং ভাষা।
আমরা কথা বলার জন্য বাংলা,ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, ল্যাটিন, স্প্যানিশ ইত্যাদি কতরকমের ভাষা ব্যবহার করি! ঠিক তেমনই অনেক রকম প্রোগ্রামিং ভাষা আছে। যেমন – সি, সি++, পাইথন, পিএইচপি, রুবি, জাভা ইত্যাদি।
প্রোগ্রামিং ভাষায় লেখা নির্দেশগুলো কম্পিউটার তথা ডিজিটাল ডিভাইস একটি রূপান্তর ব্যবস্থার মাধ্যমে মেশিন কোডে অর্থাৎ বাইনারি সংখ্যা 0,1 তে পরিণত করে নির্দেশগুলোকে বাস্তবায়ন করে।
ভাষা মেশিন কোডে রূপান্তরের ব্যবস্থা-
যেকোনো ভাষা মেশিন কোডে রূপান্তরের ব্যবস্থা দুই ধরনের। যথা-১ কম্পাইলার ২। ইন্টারপ্রেটার।
কম্পাইলার- যে রূপান্তর ব্যবস্থায় প্রোগ্রামিং ভাষায় প্রদত্ত নির্দেশগুলো একত্রে মেশিন কোডে রূপান্তর করা হয় তাকে কম্পাইলার বলে। কম্পাইলার যদি নিদেশগুলোতে ভুল পাই নাহলে রূপান্তর করতে পারে না। ইরর ম্যাসেজ দেখাবে। যেমন- সি প্রোগ্রামিংএ এধরনের রূপান্তর ব্যবস্থা দেখা যায়।
ইন্টারপ্রেটার- যে রূপান্তর ব্যবস্থায় প্রোগ্রামিং ভাষায় প্রদত্ত নির্দেশগুলো একত্রে মেশিন কোডে রূপান্তর না করে ধাপে ধাপে একলাইন বা একটি একটি করে মেশিন কোডে রূপান্তর করে তাকে ইন্টারপ্রেটার বলে। কোনো নির্দেশে ভুল পেলে সেখানে এসে থেমে যাবে বা ইরর ম্যাসেজ দেখাবে। যেমন- পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষায় এধরনের রূপান্তর ব্যবস্থা দেখা যায়।
কোন ধরনের প্রোগ্রামিং ভাষা শিখব?
পৃথিবীতে অজস্র প্রোগ্রামিং ভাষা আছে, এরমধ্যে কোনটি আমরা শিখব? যেকোনো একটি প্রোগ্রামিং ভাষা প্রথমে শিখলেই হলো। কারণ সব প্রোগ্রামিং ভাষার মূল গঠন একইরকমের, শুধু ভাষাগুলোোতে বিভিন্ন নির্দেশ লেখার নিয়ম একটু ভিন্ন থাকে। যেমন- সি প্রোগ্রামিং ভাষায় প্রতিটি নির্দেশ (স্টেটমেন্ট) শেষ হবার পর একটি সেমিকোলন চিহ্ন দিতে হয়, কিন্তু পাইথনে এই কাজ করতে হয় না। এরকম কিছু পার্থক্য থাকলেও চিন্তার কিছু নেই। আমরা একটি প্রোগ্রামিং ভাষা শিখে নিলে এরপর অন্য প্রোগ্রামিং ভাষাগুলো শেখা খুব সহজ হয়ে যাবে আমাদের জন্য। আমরা এখন পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা নিয়ে আলোচনা করব।
পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা কী ?
পাইথন একটি উচ্চস্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা। পাইথন (Python) প্রোগ্রামিং ভাষা প্রবর্তন করেন ১৯৯১ সালে নেদারল্যান্ডের অধিবাসী গাইডো ভান রসাম (Guido Van Rossum) ।
পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজটি হাইলেভের হওয়াতে এর সিনটেক্স গুলো ইংরেজি ভাষার কাছাকাছি। তাই পাইথন প্রোগ্রামে সহজেই বিভিন্ন কোড বুঝতে পারা ও লিখা যায়। ডিজিটাল ডিভাইসের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা, ডিভাইসের জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা এবং ইউজারদের বিভিন্ন সার্ভিস প্রদান করার জন্য পাইথন প্রোগ্রাম ব্যবহার করা যায়।
পাইথন এতো জনপ্রিয় কেন?
জাভা, পিএইচপি, সি++ ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহারে কোনো প্রজেক্ট বা সফটওয়্যার তৈরি করতে যেখানে ১০-১২ ঘণ্টা সময় লাগে সেক্ষেত্রে পাইথন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহারে সময় লাগে মাত্র ২-৩ ঘণ্টা। যার মূল কারণ হচ্ছে সিনটেক্স এর ব্যবহার। অন্যান্য প্রোগ্রামে কোনো একটি কাজের জন্য কোড যদি ১০ লাইন লিখতে হয় সেক্ষেত্রে পাইথনে ২-৩ লাইন কোড লিখলেই হয়। পাইথনের কোডগুলো ইংরেজি ভাষার সাথে মিল থাকাতে ছোটরাও তা সহজে বুঝতে পারে।
পাইথনে ছোট ছোট সিনটেক্স দিয়ে বড় বড় সমস্যার সমাধান করা যায়। যারা ডেটা এনালাইসিস নিয়ে কাজ করে তারা পাইথন ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছে বেশি। এছাড়াও ওয়েবডেভেলপমেন্ট, সিস্টেম স্ক্রিপ্ট এবং অটোমেশন , মেশিন লার্নিং, গেম তৈরি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সে পাইথন ব্যবহ্রত হচ্ছে। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টসহ আরো জটিল জটিল ফিল্ডে পাইথনের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শুভেচ্ছান্তে-
খোরশেদ আলম
সিনিয়র শিক্ষক
সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম।